আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তিময় বিশ্ব ও উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গঠনে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এখন বিশ্বব্যাপী সংকট চলছে। আর এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে কিছু লোক ঘোলাটে করা আর ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন, এই প্রবণতাটা আমাদের সকলকে পরিহার করতে হবে। শুধু মুখে বললে চলবে না। নিজেদের থেকে পাশে দাঁড়াতে হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা মানুষের দুর্ভোগের কথা ভাবেন না। শুধু নিজেদের আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করেন। এজন্য তারা অনেক সময় পণ্য লুকিয়ে রাখেন এবং কৃত্রিম উপায়ে জিনিসের দাম বাড়ায়। তারপরেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপির হিসাবে আমাদের অবস্থান ৪১তম। বাংলাদেশকে আরও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে আমাদের একটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শান্তিপূর্ণ সমাজ এবং সামাজিক সম্প্রীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত এবং জ্বালানি, খাদ্যসহ নানা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে আমাদের মতো অর্থনীতি মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে হবে। এরিমধ্যে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, মা ও শিশুমৃত্যু হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তাছাড়া গত এক দশকে সাক্ষরতার হার ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২১ জনে এবং প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যু হার ১৭৩ জনে নেমে এসেছে। ফলে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ হবে যাতে সমাজের কেউ পিছিয়ে না থাকে। পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত করতে হবে। মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব। এ অবস্থা থেকে এখনই বের হয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং কৃষিসহ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত ক্ষেত্রগুলোয় সুনির্দিষ্ট সহায়তা প্রয়োজন। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত বিভাজন অবশ্যই দূর করতে হবে। আর্থসামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে আমাদের সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বব্যাপী অংশী জনদের সঙ্গে একযোগে কাজ বা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনো রূপ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা জনগণের ক্ষতি হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড সংঘটিত হতে দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া সাইবার অপরাধ এবং সাইবার সহিংসতা মোকাবেলা লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যতামূলক চুক্তি প্রণয়নে একসঙ্গে কাজ আমরা দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং আর্থিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের মতো বৈশ্বিক প্রতিকূলতাগুলোর রূপান্তরমূলক সমাধান খুঁজতে হবে। কারণ আমরা শান্তি চাই; মানব-কল্যাণ চাই। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি চাই। আগামী প্রজন্মের লক্ষ্যে শান্তিময় বিশ্ব, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করতে চাই। তাই সবাইকে একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে একটি উত্তম ভবিষ্যৎ তৈরির পথে এগিয়ে যেতে হবে।