পৃথিবীর পরিবেশগত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই বাড়ছে দূষণ। পরিবেশে জীবের স্বাভাবিক অবস্থা বা জীবনযাত্রায় বিঘ্ন সৃষ্টিতে সক্ষম ক্ষতিকর অবস্থার নাম দূষণ। মানুষের বহুমুখী কর্মকান্ডই পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ। বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণ জনিত অসুখবিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিবেশ দুষণজনিত কারণে বাংলাদেশে যেখানে ২৮ শতাংশ মৃত্যু হয় সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভারতে ২৬ দশমিক ৫। বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণের শিকার দরিদ্র নারী, শিশুরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কারণ তাদের বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করেন, যেখানে সীসা দূষণেরও ঝুঁকি রয়েছে এর ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে এবং স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে। দূষিত এলাকায় বসবাসের ফলে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যেতে পারে। এসব এলাকার দূষিত বায়ু এবং পানির কারণে তার নিজের এবং গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। দীর্ঘদিন বায়ু দূষণের মধ্যে থাকলে বা এরকম পরিবেশে কাজ করলে ছোট ছোট কণাগুলি ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করে ফুসফুসে নানারকম রোগের সৃষ্টি করে যেমন অ্যাসবেসটস কণা ফুসফুসের ক্যানসার এবং হৃদরোগের দেখা দিতে পারে। এমনকি সেটা মস্তিষ্ক, লিভার বা কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও তৈরি করতে পারে। কয়লার গুড়ো অ্যানথ্রাকোসিস, ব্ল্যাকলাং, তুলোতন্তু বিসিনোসিস, অ্যালার্জি প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে। আমাদের দেশে সর্বদাই দুষিত হচ্ছে নদী নালা খাল-বিলের পানি। এসব পানির দ্বারা দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুষিত পানি বা নদীর ভেতর যেমন মাছ বা প্রাণী থাকে, যেসব ভেজষ উৎপন্ন হয়, দূষণ সেসব প্রাণীর ভেতরেও ছড়িয়ে পড়ে। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে এসব ক্ষতিকর পদার্থ আবার মানব দেহের শরীরে চলে আসে। ফলে সরাসরি দূষিত পানির কাছাকাছি না থাকলেও, সেসব দুষিত পদার্থ এসব মাছের মাধ্যমে মানব দেহে আসে, যার ফলে ক্রুটি পূর্ণ জন্ম বা ক্যান্সার হতে পারে। এমনকি খাদ্য চক্রের মাধ্যমে মানব শরীরে ঢুকছে সীসা, প্লাস্টিকসহ নানা ক্ষতিকর পদার্থ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যেকোনো মূল্যে পরিবেশ দূষণ রোধ করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে হলে আইনের প্রয়োগ তো করতেই হবে, সেই সঙ্গে বায়ু দূষণ যাতে না হয়, পানি বা শব্দ দূষণ না হয়, সে ব্যাপারে সকল সাধারণ মানুষদেরকে সতর্ক হতে হবে। পরিবেশ দূষণ এড়ানোর জন্য শুধু সরকার বা কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না। নিজেরা আগে পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সরকারকে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে হবে। তাহলে কমানো সম্ভব পরিবেশ দূষণ।