বর্তমানে পানি নেই সরাইলের মিনি কক্সবাজারের দু’দিকে। সড়কের পাশেই ফসলি মাঠ। ধূঁলোবালিতে একাকার। সৌন্দর্যে অনেকটা ভাটা। তারপরও ঈদ আনন্দে পর্যটকদের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার হার মানিয়েছে অতীতের সকল রেকর্ডকে। কয়েক সহ¯্রাধিক পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়েছিল স্থানটি। কিশোর কিশোরী ও শিশুদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না পুটিয়া ব্রীজের দু’পাশে ও সদ্য চালু হওয়া রিসোর্টটিতে। প্রায় ৩ ঘন্টার জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিল সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের আকাশী হাওরের মাঝখানের ধর্মতীর্থ এলাকাটি। নাগরদোলায় চড়তে লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে শিশুদের। লাইন ছিল সড়কের পাশের ফুসকা চটপটি ও ঝালমুড়ির ভাসমান দোকান গুলোতে। সুযোগে দু’পাশের হাওরে কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে গিয়েছিল অনেক প্রেমিকযুগল। অটোরিকশা, মোটরবাইক, পিকআপ ভ্যানে করে উঠতি বয়সের কিছু ছেলে মেয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ও আপত্তিজনক ভ্রমন ভাবিয়ে তুলেছে অনেক অভিভাবককে। গত ২২ এপ্রিল শনিবার ঈদ-উল-ফিতরের দিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এমন চিত্রই ছিল ‘সরাইলের মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত ধর্মতীর্থ এলাকার। আর রাতে সরাইল সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় সম্প্রতি চালু হওয়া ফুসকা জোনটি নানা ধরণের আলোর জ¦লকানিতে কাছে টেনেছে দর্শনার্থীদের। নারী-পুরূষ, যুবক-যুবতি, কিশোর-কিশোর ও শিশুদের উপস্থিতিতে কাণায় কাণায় পূর্ণ ছিল ফুসকা জোনটি।
সরজমিনে দেখা যায়, মিনি কক্সবাজার খ্যাত স্থানটির দু’দিকে পানি শুন্য। তাই সেখানে এ সময়ে নেই কোন কলকাকলি। নেই ঢেউয়ের সৌন্দর্য্যও। শুকনো পুরো আকাশী হাওর। ইরি বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ। শতাধিক ট্রাক্টর সেখানকার ফসলি জমির মাটি কাটছে। চলছে ধূঁলোবালির রাজত্ব। বৈশাখের প্রচন্ড তাপদাহে হাঁসফাঁস করছে কৃষক ও ইটভাটার শ্রমিকরা। এরইমধ্যে গত শনিবার ছিল ঈদ-উল-ফিতরের দিন। বৃষ্টি ছিল না। বর্ষাকালের সৌন্দর্য না থাকলেও পর্যটকরা চোখ বন্ধ করে দৌঁড়াচ্ছেন মিনি কক্সবাজার এলাকায়। বিকাল ২ টার পর থেকেই হাওর বেষ্টিত সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের সরাইলের মিনি কক্সবাজারের দিকে ছুটতে থাকে পর্যটকরা। বিকেল ৩ টার মধ্যে সড়কের ২-৩ কিলোমিটার এলাকায় মানুষের ঠাসাঠাসি। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না গত বছর চালু হওয়া রিসোর্টটিতে। ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মটর বাইক, প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যান ও মাইক্রোবাসে করে আসছেন পর্যটকরা। সাথে পরিবার। কারো সাথে ভালবাসার মানুষ। অনেকে আসছেন গ্রƒপ বেঁধে। বাহারি সাজে উপস্থিত হচ্ছে নারী-পুরূষ, শিশু, কিশোর কিশোরী ও বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নয়। সেখানে আসছেন মাধবপুর, নরসিংদী, ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ জেলার লোকজনও। একসময় সড়কটির ২-৩ জায়গায় মানুষের জটলা বাঁধে। হেলে দোলে নেচে গেয়ে সড়কে দু’দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটছে বিভিন্ন বয়সের ছেলে মেয়েরা। এ যেন এক অন্য রকম আবেগ অনুভূতি। ভাসমান হকারকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন ১৫-২০ জন করে। পছন্দের ছটপটি, আলুভাজা, ফুসকা, ঝালমুড়ি, বুট-বাদাম ক্রয়ে ব্যস্ত তারা। দেদারছে বিক্রি হচ্ছে শশা আমড়া ও ভিন্ন স্বাদের কোমল পানীয়। সড়কের পাশের খালি মাঠে হারিয়ে যাচ্ছে অগণিত প্রেমিকযুগল। কেউ হাঁটছে। কেউ ঘাসের উপর বসে গল্প করছে। অনেকে গান শুনছে আর লাফালাফি করছে। অনেকে প্রবেশ করছে রিসোর্টের ভেতরে। রিসোর্টের ভেতরে ও প্রবেশ পথেও ছিল পর্যটকদের ভীড়। রিসোর্টের পাশেই নাগরদোলা ঘুরছে। ২০ টাকা ফি দিয়ে নাগরদোলায় ওঠতে লাইন ধরে অপেক্ষা করছে শিশু কিশোররা। কালীকচ্ছের রহমত উল্লাহ (২১), নাসিরনগরের কাউছার মিয়া (২৪) ও নন্দনপুরের সুমাইয়া বেগম (১৯) জানায়, বর্তমানে আমাদের এলাকায় খোলা ও উম্মোক্ত জায়গার খুবই অভাব। তাই সামান্যতম সময় বিনোদন করার সুযোগ কম। দু’দিকে পানির অভাবে সৌন্দর্য কম হলেও খোলামেলা জায়গায় একটু বিনোদন বা আনন্দ উপভোগ করতেই এসেছি। গৃহিনী জেসমিন বেগম, রোকশানা আক্তার সুমি, সমাজকর্মী সৈয়দ নাদির হোসেন ও আনার মিয়া বলেন, একটু স্বস্থি ও শান্তির জন্য ছেলে মেয়েরা এখানে আসতে চায়। তবে এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ল্যাট্রিন। আর বৃষ্টি বা ঝড় আসলে কোন নিরাপত্তা নেই। পর্যটক বাড়লেও জায়গাটির সৌন্দর্য ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির কোন নমুনা দেখছি না।