ভোলার দৌলতখানে বিশ বছর পর মায়ের কাছে ফিরে এসেছে মেয়ে মুক্তা। উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের চরশুভী গ্রামের মরহুম আবদুল লতিফ পেশকার বাড়ির মৃত তাজুল ইসলামের মেয়ে মুক্তা। বাবা তাজুল ইসলাম মেয়েকে হারিয়ে বুকের কষ্ট চাপা দিয়ে রাখতে না পেরে অবশেষে সাত বছর আগে মারা যান। বড় ভাই গিয়াসউদ্দিনও বোনকে হারিয়ে হারানো শোকে কষ্টে কান্নাকাটি করায় বর্তমানে অন্ধ ও ভারসাম্যহীন। এদিকে হঠাৎ বিশ বছর পর হারানো মেয়ে মুক্তার সন্ধান মেলেছে। সংবাদটি এলাকায় বিদ্যুৎ চমকানোর মত ছড়িয়ে পড়লে পেশকার বাড়ি আনন্দের বন্যায় প্লাবিত হয়। এলাকাবাসী আত্মীয় স্বজনরা এসে ভীড় জন্মায় বাড়ির আঙ্গীনায়। সংবাদ পেয়ে সংবাদ কর্মীরাও ছুটে যায় পেশকার বাড়ি। হারানো মেয়ের খোঁজ মেলেছে এমন খুশির সংবাদে মা মনোয়ারা বেগম আবেগ আপ্লূত হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পরেন। পেশকার বাড়ির মরহুম আবদুল লতিফ পেশকারের ছেলে ভোলা ওবায়দুল হক কলেজের সহকারী অধ্যাপক কামরুল আহসান হিরণ ও ছোট ভাই প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক আবদুস সালাম মামুন জানান, ঢাকা থেকে আসাদ নামে এক লোক তার বন্ধুর পারিবারিক বিবাহ অনুষ্ঠানে ভোলা আসে। অনুষ্ঠানে ভোলার গুপ্তগঞ্জের ঘোষের হাট এলাকার একটি হারানো মেয়ে পাওয়া গেছে সবাইকে মুক্তার ছবি দেখায়। ৩দিন পর গ্রামীণ ব্যাংকের এক স্টাফ ৫মে শুক্রবার আসাদকে নিয়ে দৌলতখানের ঘোষের হাট এসে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে মুক্তার বাড়ির খোঁজ পায়। তবে মুক্তা কখনও তার বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলায় এই ঠিকানা বলতে পারিনি। শুধু বাড়ির কাছে গুপ্তগঞ্জ ঘোসেরহাট জানিয়েছে বলে জানা গেছে। মুক্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে সে ৯ বছর বয়সে খালার সাথে ঢাকা সায়েদাবাদ এলাকায় বেড়াতে যায়। বাসা থেকে বের হয়ে অলিগলি আর চিনতে না পারায় সে আর বাসায় ফিরতে না পেরে হারিয়ে যায়। পরে সালাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি মুক্তাকে রাস্তায় পেয়ে বাসায় নিয়ে যায়। মুক্তা তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা না বলতে পারায় সে মুক্তাকে নিজের বাসায় রেখে লালন পালন করে। পরে ছোট ভাই পারভেজের কাছে তাকে বিবাহ দেয়। পারভেজ ঢাকা নবাবপুর এলাকায় মুক্তাকে নিয়ে থাকে। সে ওই এলাকার একটি ওয়ার্কসপে চাকরি করেন। মুক্তার আকসারা (১৩) ও আফসারা ফাবিহা (১২) নামে দুইটি মেয়ে আছে। আসাদ মুক্তার স্বামী পারভেজের বন্ধু। মুক্তার মেজভাই সোহাগ ঢাকা থেকে বোন মুক্তাকে শনিবার দৌলতখানে নিয়ে আসে। হারানো মেয়ে, জামাই ও দুই নাতনী পেয়ে দুঃখী মুক্তার মায়ের মুখে সুখের হাসি ফোটছে। মুক্তা তার স্বামী ও দুই মেয়েকে নিয়ে যেন সুখে থাকতে পারেন সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।