দেশের সবচেয়ে প্রচলিত মাদক ইয়াবায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একটি প্রজন্ম। মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ মাদকের বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এশিয়ার গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজ নামে পরিচিত মাদক চোরাচালানের তিনটি প্রধান অঞ্চলের কেন্দ্রে বাংলাদেশের অবস্থান। ইয়াবাসহ মাদকপাঁচার বন্ধে দুই বছর আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। জোরেশোরে চলে কথিত বন্দুকযুদ্ধও। এ সময় বিশেষ নজর দেওয়া হয় ইয়াবাপাঁচারের সদর দরজাখ্যাত টেকনাফে। তখন অনেকে ধরে নিয়েছিলেন এবার হয়তো মাদকের পাঁচার ও কেনাবেচা কমে যাবে। কিন্তু এতদিন পর এসে বার্তা দিচ্ছে উল্টোচিত্রের। প্রতিদিনই মিয়ানমার থেকে দেশে ঢুকছে বড় বড় চালান। চেনা পথগুলো বদলে নতুন পথ দিয়েই সেগুলো আনছে চোরাচালানিরা। পাঁচারে প্রতিদিনই ব্যবহার হচ্ছে নিত্য নতুন কৌশল। দেশব্যাপী মাদকবিরোধী নিয়মিত অভিযানেও কমেনি মাদকের বিস্তার। ঢাকাসহ সারা দেশে মাদকের ব্যবহার বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। পুরো সীমান্ত সিল থাকার পরও আগের মতোই দেশে ঢুকছে মাদক। ক্রমেই যেন ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে মাদক পরিস্থিতি।
বেশির ভাগ এলাকায় মাদক অনেকটা গোয়েন্দা কায়দায় বিক্রি হয়। কয়েক দফা যাচাইয়ের পর গ্রাহকের হাতে পৌঁছে। এর নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী মহলের কিছু ব্যক্তি। তবে মাদকের সহজলভ্যতায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। ২০০০ সালের পর টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসতে শুরু করে। এরপর এটি খুব দ্রুতই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এখন সারা দেশে প্রতিদিনই গড়ে লাখের বেশি ইয়াবা জব্দ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইয়াবা পাঁচারের ১৫টি রুট দুর্গম হওয়ায় চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সত্যি এটাই পাঁচারকারীদের নিত্যনতুন কৌশলের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা। মিয়ানমারের শান ও কোচিন প্রদেশে কারখানা স্থাপন করে ইয়াবা উৎপাদন করা হচ্ছে। এ ১৫টি পয়েন্টের মধ্যে ১০টি কক্সবাজার আর পাঁচটি বান্দরবন সীমান্তে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর তল্লাশি থাকায় সম্প্রতি রুটও বদল করেছেন ইয়াবার কারবারিরা।
কৌশল পরিবর্তন করে তারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাঁচারে বেছে নিয়েছে সাতটি নতুন রুট। এর মধ্যে রয়েছে পাশের মিজোরাম, আসাম ও মণিপুর হয়ে ত্রিপুরার দুটি রুট আর বান্দরবন, কক্সবাজার, বরিশাল, যশোর ও সাতক্ষীরার পাঁচটি রুট। মূলত কাটআউট পদ্ধতিতে দেশের ভিতরে চলছে এ কারবার। বাহক প্রাথমিক অবস্থায় জানে না কে গ্রহণ করবে। বর্তমানে বাহকের পেটের ভিতর পাকস্থলীতে করে ইয়াবা বহন বেড়েছে। এ ছাড়া পিঁয়াজ, বেগুন, আসবাব, গাছের গুঁড়িসহ বিভিন্ন মালামালের সঙ্গে বহন করা হয় ইয়াবা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তরুণসমাজে মাদকাসক্তি ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। মাদকাসক্তরাও জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। মাদকের প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই মাদক নির্মূলের উৎস বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে মাদক বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদকের বিস্তার রোধে এর সরবরাহ ও চাহিদা বন্ধ করতে হবে নয়তো, দেশে আরও বেশি মাদকের ঝুঁকি তৈরি হবে।’