লক্ষ্মীপুরে পরকীয়া করে চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে পালিয়ে সংসার শুরু করায় স্ত্রী শহর বানুকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যার দায়ে স্বামী মো. খোকন শেখকে (৪৯) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন একটি আদালত। একইসঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত খোকন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের মানিকদাইড় গ্রামের মেহের আলী শেখের ছেলে।
সোমবার (১৫ মে) দুপুর ১২ টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। রায়ের সময় দণ্ডপ্রাপ্ত খোকন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর থেকে সে কারাগারে ছিল খোকন। জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, খোকন শেখের স্ত্রী শহর বানু পরকীয়ায় জড়িয়ে দেবর ফকির আলী শেখের সঙ্গে লক্ষ্মীপুরে পালিয়ে আসেন। সেখান থেকে ফিরিয়ে নিতে আসলে খোকনের সঙ্গে তিনি যেতে রাজি হননি। এতে খোকন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় আদালত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়িক কারণে খোকন শেখ পরিবার নিয়ে গাজীপুরের তুরাগ থানার ভাবনারটেক এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। খোকনের চাচাতো ভাই ফকির আলীর সঙ্গে তার স্ত্রী শহর বানুর অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর একপর্যায়ে বানু তার প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যান। পরে তারা বিয়ে করেছেনও বলে জানা যায়।
তারা লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাঞ্ছানগর এলাকার একটি টিনশেড ঘরে ভাড়া থাকতেন। ঘটনাটি জানতে পেরে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে খোকন লক্ষ্মীপুর যান। তখন বানু জানিয়ে দেন তিনি খোকনকে তালাক দিয়েছেন। তার সঙ্গে ফিরবেন না। ২০২২ সালের ১৭ মার্চ সকালে ফকির শেখ কাজে বের হয়ে যান। তখন বানু ছাড়া ঘরে আর কেউ ছিল না। বানুকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য খোকন আবারও সেখানে যান। কিন্তু বানু তার সঙ্গে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তিনি খোকনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে খোকন ঘরে থাকা ছুরি দিয়ে বানুকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই বানু মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরদিন নিহতের ছেলে সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে খোকনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
একইদিন খোকনকে গ্রেপ্তার করে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। গ্রেপ্তারের পর থেকেই আসামি কারাগারে ছিলেন। ঘটনার ১ মাস পর গত বছরের ১৮ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক জহিরুল আলম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।
শহর পুলিশ ফাঁড়ির (পরিদর্শক) ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম হত্যা মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার এক মাসের মাথায় আদলতে তদন্ত প্রতিবেদন দেন। এতে খোকন শেখকে অভিযুক্ত করা হয়। আদালত আসামির স্বীকারোক্তি,তদন্ত প্রতিবেদন এবং সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে খোকন শেখকে দোষী সাব্যস্ত করে ঘটনার ১৩ মাসের মাথায় সোমবার এ রায় দেন।