রায়হান (১৫) নামের এক কিশোরের ধর্ষণে ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরী (১৪) দেড় মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। এ ঘটনায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় দফারফার পরেই পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরে অভিযুক্ত কিশোর, কিশোরের দুই বোন, চাচাত ভাইসহ এক শালিশদারকে গ্রেপ্তার করে। একই ঘটনায় আরো কয়েক শালিশদারকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাটি হাজীগঞ্জের হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের লাওকোরা গ্রামের। কিশোরী একই বাড়ির ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। বাড়ির সম্পর্কে উভয়ে চাচা-ভাতিজি। আসামিরা হলেন একই গ্রামের সর্দার বাড়ির সেরাজল হকের ছেলে রায়হান (১৫), রাযহানের দুই বোন মোসাঃ হাজেরা বেগম(২৫), মোসাঃ খালেদা আক্তার(২২), হাছান সর্দারের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩০) ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মৃত অলিউল্লাহ'র ছেলে রহমত উল্লাহ্ (৪০)। এদের মধ্য প্রধান আসামি রায়হান ছাড়া বাকীদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলা করার দিনেই পুলিশ প্রধান আসামীসহ সবাইকে গ্রেপ্তার করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২১ মার্চ বিকেলের দিকে নিজ বাড়িতে কিশোরী ও কিশোর বাড়িতে ধানের খড় (ক্ষের) এর কাজ করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটায়। পরে কিশোরী অন্ত:সত্তা হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসলে নড়চড়ে বসে কথিত শালিশদারা। এদিকে এই ধর্ষনের বিষয়টি ধামাচাপা দেবার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য রহমত উল্যাহ্ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাইয়্যুম বেপারীর নেতৃত্বে শুক্রবার (১২ মে) বিকালে একটি শালিসি বৈঠকের মাধ্যমে এ রফাদফা করেন। কিশোর রায়হান স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ৮শ শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করে গত চলিত শিক্ষাবর্ষে আর মাদ্রাসায় যায়নি। কিশোরী স্থানীয় অপর একটি মাদ্রাসার ৮মম শ্রেনিতে অধ্যায়নরত।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বিকালে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও দুই পরিবারের লোকজনকে নিয়ে শালিসি বৈঠকে বসেন ইউপি সদস্য রহমত উল্লাহসহ স্খানীয় একটি চক্র। ওই বৈঠকে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবারকে চাপ-সৃষ্টি করে টাকার বিনিময়ে রফাদফা এবং দুই পক্ষের কাছ থেকে একটি ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ঐ বৈঠকে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরির চিকিৎসার জন্য অভিযুক্ত রায়হানের পরিবারকে নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই বৈঠকে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাইয়্যুম বেপারী ও কুদ্দুস সর্দারসহ অন্যান্য শালিসদার ও দুই পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরির স্বজনরা জানান, মেম্বারসহ (ইউপি সদস্য) সবাই চেয়েছে বিষয়টির সমাধান হোক। তাই তাদের কথায় আমরা রাজি হয়েছি।
ইউপি সদস্য রহমত উল্যাহ্ জানান, উপর মহলের সঙ্গে কথা বলে এবং এলাকার শান্তির জন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে শালিসি বৈঠক করা হয়েছে। তবে উপর মহলের কে বা কার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাইয়্যুম বেপারী শালিসি বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত শুক্রবার মেম্বার (ইউপি সদস্য) রহমত উল্যাহ তাকে নিয়ে ওই বাড়িতে যায়। এরপর মেম্বারের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের চারজন সালিশদার ও দুই পরিবারের লোকজন বসে বিষয়টির সমাধান করেন। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়ে উভয় অপ্রাপ্ত বয়স এবং তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজি হয়। তাই, আমি তাদের থানা বা কোর্টে (আদালত) যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু মেম্বার, দুই পক্ষের লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা বিষয়টির সমাধান করে নেয়। পরে শুনেছি মেয়ের চিকিৎসার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে আমি ছিলাম না।
ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি এমনটি হয়ে থাকে, তাহলে আমার ইউপি সদস্য রহমত উল্ল্যাহ এমন ঘটনার সমাধান না করে, ধর্ষিতার পরিবারকে আইনি সহায়তায় দিতে পারতেন।
হাজীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম জানান, কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, অন্য শালিমদারদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে,প্রয়োজনে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ জানান, এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধন) ২০০৩ এর ৯(১) তৎসহ ২০২/২১২/২১৩ মামলা হয়েছে। মামলায় সকল আসামীদেরকে আটক করা হয়েছে।