জ্যৈষ্ঠ মাসকে বলা হয় মধুমাস জৈষ্ঠ্য। এই মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু ফল। ফলের তালিকায় রয়েছে- আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ছাড়াও অন্যতম আরেকটি ভিন্নধর্মী রসালো ফল তালের শাঁস। তালের শাঁসের নরম অংশটি খুবই সুস্বাদু। গ্রাম্য ভাষায় এটি তালের লেওয়া বা “তালকুই” নামে বেশি পরিচিত। ভ্যাপসা গরমে তালের এই শাঁস খাওয়া মানুষের কাছে খুবই প্রিয়।
চাঁদপুরের মানুষ তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ। গরমে অস্থির পথচারীদের এক মুহূর্তের জন্য হলেও তৃষ্ণা স্বস্তি এনে দিচ্ছে কচি তালের শাঁস। প্রচন্ড গরম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের পিপাসা চাহিদা বেড়েছে। ডাবের দাম বেড়ে যাওয়ায়, ডাবের পানির পরিবর্তে কচি তালের শাঁস খেয়ে পানির চাহিদা পুরন করছে। বছরের শুরুতে মৌসুমি এ ফলের চাহিদা বেড়েছে। চাঁদপুর শহরের পাইকারি ফলের আড়ত ডাকাতিয়া নদীর পাড় চৌধুরী ঘাট ও বাবুরহাট বাজারে এবার প্রচুর কাঁচা তালের আমদানি হতে দেখা যায়।
সরেজমিনে বাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,শহর এলাকা সহ বিভিন্ন উপজেলা সদরে গ্রামীণ জনপদের হাট-বাজারে প্রচুর পরিমাণ তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে। ছোট বড় প্রকার ভেদে প্রতিটির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। পাইকারি তাল বিক্রেতারা জানিয়েছেন তারা গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে গাছ চুক্তিতে তাল সংগ্রহ করেন। গত বছরের চেয়ে এবার দামটা একটু বেশি। আকারভেদে প্রতি হাজার কচি তালের দাম ৭- ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।
পুরাণ বাজারের খুচরা কচি তালের শাঁস বিক্রেতা মধুসূদন হাইস্কুলের পাশের দোকানদার রফিক বলেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এখন তালের শাসের ভালো চাহিদা রয়েছে। প্রতি পিচ ২০ থেকে ৩০ টাকায় দরে একেকটা বড় তাল বিক্রি করছি। বিক্রিও বেশ ভালো। তবে বেশি দামে ক্রয় করার কারণে লাভ কম হচ্ছে।বিক্রেতারা আরো জানান, তালগাছ থেকে ফল কেটে আনা একটি কষ্টকর বিষয়। কাটার জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে কেটে আনতে হয়। একটি গাছে ৩০০ থেকে ৩৫০ ফল পাওয়া যায়। জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিকে বিক্রি শুরু হয়, চলে পুরো মাস জুড়ে।
উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, বাণিজ্যিক ভাবে এই অঞ্চলে তাল গাছের তেমন বাগান নেই। সাধারণত বসত বাড়ী বা রাস্তার পাশে মানুষ তালগাছ রোপন করে থাকে। তালগাছ লম্বা হওয়ার কারণে বজ্রপাত রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতি রোধ করে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার বেলায়াত বলেন,তালের শাসের পুষ্টি গুণ অনেক। প্রচ- গরমে কচি তালের শাঁস এবং এর ভেতরের মিষ্টি পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে শরীরে এনে দেয় আরামদায়ক অনুভূতি।
তিনি আরো বলেন, তালের শাসে আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক। তালের শাঁস হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে। কচি তালের শাস রক্তশূন্যতা দূর করে। মুখের রুচি বাড়ায়। এতে সুগার কম থাকায় ডায়াবেটিক রোগিরাও খেতে পারে।