বাংলাদেশে কোনো সরকারি প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ে শুরু হওয়ার নজির খুব কম। কোনো প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষও হয় না। দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়, আর তাতে ব্যয়ও বেড়ে যায়। এ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। মেয়াদ বাড়িয়েও অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। এ নিয়ে অনেকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এপ্রিল মাসের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির যে অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে এপ্রিল পর্যন্ত ৫০.৩৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে, যা করোনার সময় ছাড়া গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের চেয়ে ৪.২৪ শতাংশ কম বাস্তবায়িত হয়েছে চলতি অর্থবছর। এমনকি শুধু এপ্রিলে গত অর্থবছরের তুলনায় ০.৮৮ শতাংশ কম বাস্তবায়িত হয়েছে। আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের শুধু এপ্রিলে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৮.৬৮ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে একই সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছিল ৯.৫১ শতাংশ। অন্যদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের অডিট প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিআইডিএস ২০১২-১৩ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত ১০ বছরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন বাস্তবায়িত ৩৬৯টি প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে মেয়াদ বাড়ে সবচেয়ে বেশি। ৮০ শতাংশ প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। বারবার মেয়াদ বাড়ানোর কারণে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে ব্যয় বাড়ে প্রায় ৫৬ শতাংশ। গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ২৮৯টির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আর নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়েছে মাত্র ৭২টি প্রকল্প। ২০১টি প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। ১৬০টি প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই শেষ হয়েছে। ১৭৯টি প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ উভয়ই বেড়েছে। মেয়াদ এবং ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্প শেষ হয়েছে মাত্র ৪৯টি। গবেষণায় উল্লেখ হয়েছে যে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া, কাজের ধরনে পরিবর্তন, দরপত্র আহ্বানে ধীরগতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রত্যন্ত এলাকায় প্রকল্প হওয়া ও নির্মাণসামগ্রীর পরিবর্তন; এ ছাড়া আইনি সমস্যা, নিরাপত্তা, দক্ষ মানবসম্পদের অভাব, পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব ও দাতা সংস্থার পরিবর্তনের কারণেও প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যে মাত্রায় বিলম্ব হয় ও খরচ বাড়ে তাতে রাষ্ট্রের অর্থ ও সময়ের অপচয় হয়। এটি বন্ধ করা সময়ের দাবি।