খরা ও তীব্র দাবদাহের কারণে উৎপাদনের ভরা মৌসুমে মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে সবুজ চায়ের কুড়ি সাদা হয়ে পুড়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ১০ শতাংশ বাগানের চাগাছ নষ্ট হয়ে গেছে। আবার গাছে নতুন কুঁড়িও আসছে না। তাই চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌলভীবাজারে ছোট-বড় পাহাড় ও টিলার উঁচু-নিচু মাঠজুড়ে চা বাগান। উৎপাদনের ভরা মৌসুমে এসেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া আর অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও দাবদাহের প্রভাবে বাগানের সবুজ সজীবতা অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চা উৎপাদনের স্বাভাবিক নিয়মে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকা দরকার। অথচ গত এপ্রিল থেকে মৌলভীবাজারে তাপমাত্রার পারদ ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের তুলনায় কম হচ্ছে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই মূলত এটি হচ্ছে।’
এরই মধ্যে মৌলভীবাজারের চা বাগানের প্রায় ১০ শতাংশ চাগাছ বৃষ্টির অভাবে এবং দাবদাহে পুড়ে গেছে। এ ছাড়া বাগানগুলোতে লাল মাকড়সার আক্রমণসহ নানান রোগবালাই ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে কীটনাশক ছিটিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত পাতা উত্তোলন করতে না পারায় বেকায়দায় পড়েছেন চা শ্রমিকরা। তারা জানান, যে পরিমাণ চাপাতা উত্তোলন করার কথা, সেই পরিমাণ উত্তোলন করা যাচ্ছে না। এতে ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তবে চা শিল্পকে বৈরী আবহাওয়া থেকে বাঁচাতে বাগানগুলোতে কৃত্রিম জলাধারে পানি সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন টি প্ল্যান্টার্স ও টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পরিচালক জহর তরফদার। তিনি বলেন, ‘পানির কৃত্রিম জলাধার তৈরি করতে হবে। সেটি থেকে বাগানে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এটি করতে পারলে চায়ের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করি।’
এদিকে বাংলাদেশ টি-অ্যাসোসিয়েশন সিলেট শাখার চেয়ারম্যান জি এম শিবলী বলেন, ‘আগামী মাসগুলোয় যদি আমরা পর্যাপ্ত বৃষ্টি পাই এবং সেই সঙ্গে সূর্যের আলো পাই, তাহলে হয়তো আমরা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারব।’ বাংলাদেশ চা বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছর ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।