গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্বে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে সীমাহীন দুর্নীতি ও সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা পরিষদের রাজস্ব/উন্নয়ন তহবিল হতে উন্নয়ন/মেরামতের নামে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। অথচ ওই প্রকল্পগুলো পূর্বেই বিভিন্ন সময়ে এডিপি/রাজস্ব/উন্নয়ন তহবিল/পিআইসি/ইউনিয়ন পরিষদ ও এলজিএসপির বরাদ্ধ দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এ ছাড়া দরপত্র অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্পে দূর থেকে মাটি এনে কাজ করার কথা থাকলেও তিনি পছন্দের ঠিকাদারের সাথে যোগসাজসে প্রকল্পস্থল হতেই মাটি সংগ্রহ করে কাজ করার অনুমতি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও সরকারী বিভিন্ন প্রকল্প ও বিভিন্ন ঠিকাদারের চেক নিজ একাউন্টে জমা করে তাদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে।
২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের জুলাই-আগষ্ট মাসে উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের সাতানীপাড়া-জয়রামবেড় রাস্তাটি মেরামতের জন্য এইচবিবি প্রকল্প গ্রহণ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে জঋছ করে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিজেই আত্মসাত করেন। কিন্তু রাস্তাটিতে বিগত প্রায় ৪/৫ বছরের মধ্যে ঐ রাস্তায় কোন প্রকার মেরামত বা উন্নয়ন কাজ করা হয়নি। একই ইউনিয়নের বক্তারপুর-মোহানী ব্রীজ রাস্তায় এইচবিবি প্রকল্প দেখিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে জঋছ করে ১০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। রাস্তাটি বিগত প্রায় ৮/১০ বছর আগে কার্পেটিং দ্বারা উন্নয়ন করা হয়েছিল। বর্তমানে জঞওচ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে মেরামত হচ্ছে। কিন্তু বিগত ৮/১০ বছরের মধ্যে এইচবিবি প্রকল্পের মাধ্যমে ওই রাস্তায় কোন প্রকার কাজ করা হয়নি। উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পিপুলিয়া দক্ষিণপাড়া আবুল বাসারের কবরস্থান থেকে সামছুলের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তাটিতে পুরাতন ব্রিক ফ্যাট সলিং মেরামত কাজ দেখিয়ে ৩ লাখ ৫২ হাজার ২শত ৪০ টাকা পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে জঋছ করে উত্তোলন করা হয়। পরে ওই টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। রাস্তাটি গত ২০২০ সালে উপজেলা পরিষদের রাজস্ব/উন্নয়ন তহবিল হতে সিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন করা হয়েছিল। এছাড়াও পিপুলিয়া দক্ষিণপাড়া ফারুকের বাড়ী থেকে মোতালেব ভুইয়ার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তায় পুরাতন ব্রিক সলিং মেরামত কাজ দেখিয়ে ২০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা তার পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে জঋছ করে সম্পূর্ন টাকা নিজে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। রাস্তাটি গত প্রায় ৫ বছর পূর্বে নাগরী ইউপি সদস্য আমির হোসেনের মাধ্যমে মেরামত করা হয়েছিল। পিপুলিয়া মধ্যপাড়া মেইন রোড হতে তাইজদ্দিন ভুইয়ার বাড়ী হয়ে আবদুল মজিদ ভুইয়ার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তায় পুরাতন ব্রিক সলিং মেরামত কাজের মাধ্যমে ১ লাখ ৭২ হাজার ৪শত ১৩ টাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে জঋছ করে সম্পূর্ন টাকা উত্তোলন এবং আত্মসাৎ করেন। অথচ রাস্তাটি গত প্রায় ৪ বছর পূর্বে মেরামত করা হয়েছিল। অন্যদিকে তুমলিয়া ইউনিয়নের দারকাভাংগা মেইন রাস্তায় ২টি এপ্রোচ মেরামত (বেডস্ ফিলিং) প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৭ হাজার ৩শত ৪০ টাকা পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে জঋছ করে সম্পূর্ন টাকা উত্তোলন এবং আত্মসাৎ করেন। ওই প্রকল্পটি ইতঃপূর্বে তুমলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু বকর মিয়া নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করেছিলেন। ওই ছয়টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় অর্ধকোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসসাদিকজামানের বদলীর আদেশ হলে জরুরী ভিত্তিতে প্রায় ৬ কোটি টাকার টেন্ডার দেয়া হয়। পরে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিকোশিয়েশন করে প্রকল্পটি পছন্দের ঠিকাদারদের সমদরে, উর্ধ্ব দরে ও নি¤œ দরে প্রদান করেন। ফলে সরকারের ৩০ লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। উপজেলার একটি বড় কাজ তাঁর প্রিয় ঠিকাদারকে দেওয়ার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজটি মেসার্স ইউনুস এ- ব্রাদার্স ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এর প্রো. মো. সহিদুল ইসলাম হৃদয় পাওয়া তার সাথে খারাপ আচরণ করেন। নিয়ম অনুযায়ী কাজ শতভাগ করার পরও তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করেছেন যেন ঠিকাদার মো. সহিদুল ইসলাম হৃদয় কাজ ফেলে যেতে বাধ্য হয়। পরে তার পছন্দের সেই ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য। এ রকম বহু অভিযোগ রয়েছে উপজেলা প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে। স্থাণীয় কিছু রাজনীতিবীদ ও ঠিকাদারদের সাথে সখ্যতা গড়ে তিনি নিজেকে ক্ষমতাবান হিসেবে জাহির করেন এবং বিভিন্ন লোকজনের সাথে প্রতিনিয়ত দূর্ব্যবহার করেন। দীর্ঘ ৩ বছরের অধিক সময় পার হলেও ক্ষমতার দাপটে তিনি এখনও কালীগঞ্জে বহাল তবিয়তে আছেন।
তুমলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু বকর মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের জনগণের অসুবিধার কথা চিন্তা করে দারকাভাংগা মেইন রাস্তায় ২টি এপ্রোচ মেরামত (বেডস্ ফিলিং) কাজ নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করেছি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার এর কাছে জানতে চাইলে, তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।