যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সুষ্ঠ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক অনুষ্ঠানের জন্য এবার তাদের ভিসা নীতি পরিবর্তন করেছে। তারা বলছে, আগামী নির্বাচনে যদি কোনো অনিয়ম হয়,তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মার্কিন ভিসা প্রধান করা হবে না। এ নিয়ে এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ সরব হয়ে উঠেছে। বিএনপি মহাসচিব বলছেন, যুক্ত রাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের দাবিরই প্রতিধ্বনি। অন্যদিকে গনসংহতি পরিষদ বলছে, বর্তমান সরকার যে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ক্ষমতায় আছে তা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি প্রমাণ করে। জনগণের সংগ্রামের মধ্যদিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ গঠন করতে হবে। কোনো দেশ এসে উদ্ধার করে দিয়ে যাবে না। অন্যদিকে ওয়ার্কার্স পার্টিও সভাপতি রাশেদ খাঁন মেনন এর মাঝে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাঁচ্ছেন। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, আমরাও সুষ্ঠ অবাধ নির্বাচনে যারা বাধা দিবে, তাদের বয়কট করবো। এটা শুধু সরকারি দলের জন্য নয় বিরোধী দলের জন্যেও প্রযোজ্য। তারা নির্বাচন বয়কট করলে তারাও এ নীতির আওতায় পড়বে। পক্ষান্তরে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন নিশ্চিত করতে নতুন মার্কিন ভিসা নীতির বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্তুষ্ট’ বলে মন্তব্য করেছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। বাংলাদেশই প্রথম দেশ নয়, যার ব্যাপারে মার্কিন সরকার এরকম কঠোর নিয়ম আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এইতো সপ্তাহ দু’য়েক আগে নাইজেরিয়ায় নির্বাচনী অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাপারেও ওয়াশিংটন একই রকম সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। তবে বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়াকে ভিসা না দেওয়ার ঘোষণার ক্ষেত্রে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নাইজেরিয়ার জাতীয় নির্বাচনের দিন ছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি। সে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে, সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচন উত্তর পরিস্থিতি বিবেচনা করে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা হিসেবে এ অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভিসা প্রদান করা হবে না বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার। অন্যদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে এখনো অনেক দেরি। সাত মাস পর এ নির্বাচন হওয়ার কথা। এর আগে এমন আগাম নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসায় অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। এর আগে বিচার বহিপূর্ত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধুয়া তুলে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার নানা দেন দরবার অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন তা শুনেও না শোনার ভান করছে। নির্বাচন সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠানের জন্যে সবাই একমত। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনের সময় প্রশাসনকে ব্যবহার করে আবারো ক্ষমতায় ফিরে আসার কৌশল করেন বলে এখন বাংলাদেশে নির্বাচন আনুষ্ঠানিকতায় বন্ধী। ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে না গেলেও ভোট হয়ে যায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের মাঠে সরব হলেও ভোট কেন্দ্রে শৃঙ্খলা রক্ষায় নজর দেন না। ফলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা এটাকে সংকট হিসেবে না দেখে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় সাধারণ জনগণের তেমন কিছু না হলেও ক্ষমতাসীনদের অনেকেরই যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি, ব্যবসা রয়েছে বলে শোনা যায়। তাছাড়া অনেক ক্ষমতাসীন ব্যক্তির ছেলে মেয়েরা সেখানে লেখা পড়া করেন। কাজেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে তারা সেখানে যেতে পারবেন না, হারাবেন বাড়ি ব্যবসা। এটা নি:সন্দেহে অনেক বড় ক্ষতি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে নয়, সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সুষ্ঠ, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন জরুরি। তাই আমরা আশা করবো সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবেন এবং দেশে গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবেশ সুসংহত করবেন।