মাছের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় সুন্দরবনে বনজীবী-পর্যটক প্রবেশে সহ সকল প্রকার সম্পদ আহরনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে ১ জুন থেকে। তিন মাসের এ নিষেধাজ্ঞায় আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৯১ দিন সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ধরা সহ সকল প্রকার সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। ইতোমধ্যে সুন্দরবনের জেলে-বাওয়ালী মৌয়ালীরা লোকালয়ে ফিরে এসেছে। তবে এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় আগমী ৩ টি মাস তাদের কষ্টের মধ্যে দিনতিপাত করতে হবে বলে জানিয়েছে অনেক জেলে পরিবারে সদস্যরা। সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, ১ জুন থেকে সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন্ধ থাকবে সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পাস-পারমিট। এ সময় বন্যপ্রাণী শিকার ও বিষ দিয়ে মাছ আহরণ বন্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে বন বিভাগ। তিনি বলেন, জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশিরভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ কারণে সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদ রক্ষায় ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হচ্ছে। সুন্দরবনের কালাবগি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হাকিম বলেন, তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো, মাছের প্রজনন বৃদ্ধি। যার ফলে সুন্দরবনের সব পর্যটনকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের যাতায়াতও বন্ধ থাকবে। কারণ, এ সময় নদী-খালে পর্যটকবাহী নৌযান চলাচল করলে মাছের প্রজনন কার্যক্রম বিঘিœত হবে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের জল-স্থলভাগ শুধু জীববৈচিত্রেই নয়, মৎস্য সম্পদেরও আধার। সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার আগেই বন থেকে লোকোলয়ে ফিরছেন বনজীবীরা। আগামী তিন মাস কিভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালরা। পাথরখালী এলাকার জেলে মফিজুল ইসলাম বলেন, বন্ধ তিন মাস আমাদের অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটতে হয়। এলাকায় কোন বিকল্প কর্মসংস্থান নেই যার জন্য সমস্যা অনেক। তিনি সরকারের নিকট সহযোগিতার দাবি জানিয়েছে। তবে বনবিভাগ ও মৎসবিভাগ বলছে, নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে নিবন্ধিত বনজীবীদের ভিজিএফের কর্মসূচির আওতায় তিন মাসে ৮৬ কেজি চাল দিয়ে সহয়তা দেওয়া হবে। বর্তমানে সেই চাল বিতরন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক(এসসিএফ) এজেডএম হাছানুর রহমান বলেন, সুন্দরবনেরও কিছুটা বিশ্রাম দরকার। সারা বছর পর্যটক, জেলে ও বনজীবীদের পদচারণায় বিরক্ত থাকে বন্যপ্রাণীরা। ওই তিন মাস বন্ধ থাকায় বন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তা ছাড়া মাছের প্রজনন সময় বন্ধ রাখলে মাছের সংখ্যা বুদ্ধি পাবে। গত কয়েক বছর ওই কার্যক্রম চালু থাকায় বনে বাঘ, হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বেড়েছে বলে দাবি করে তিনি।