দেশের আদালতগুলোতে দিন দিন বাড়ছে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা। মূলত উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ, দেরিতে তদন্ত রিপোর্ট দেয়া এবং সাক্ষী হাজির না হওয়ার কারণেই মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে। ২০১৯ সালে সারা দেশের আদালতগুলোয় (সুপ্রিমকোর্টসহ) মামলার সংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ। আর বর্তমানে ওই সংখ্যা ৪২ লাখে ঠেকেছে। সাড়ে চার বছরে মামলা বেড়েছে ৬ লাখ। ৪২ লাখ মামলা নিরসনে দেশের আদালতগুলোয় বিচারক রয়েছেন মাত্র দুই হাজার। মামলাজট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধান বিচারপতি। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের অধস্তন আদালতে (জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও অধীনস্থ আদালত; ট্রাইব্যুনাল এবং সিএমএম ও সিজেএম আদালত ও অধীনস্থ আদালত) বর্তমানে ৩৬ লাখের ওপরে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মামলা আর আপিল বিভাগে বিচারাধীন ২০ হাজার। সারা দেশে অধস্তন আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলা ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৩৪৫টি। আর বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা ২০ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫৫টি। হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলার মধ্যে দেওয়ানি ৯৭ হাজার ২১৪টি, ফৌজদারি ৩ লাখ ৪০ হাজার ৪৪৩টি, রিট ৮৩ হাজার ৮৬৫টি এবং আদিম ১১ হাজার ৫৪২টি। সারা দেশে স্বত্ব এবং অন্য প্রকার মামলা বিচারাধীন ৭ লাখ ৫ হাজার ৬৭০টি। তার মধ্যে পাঁচ বছরের অধিক সময় বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২ লাখ ৩৬৪টি। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত ৩ হাজার ৬৭৭টি। পারিবারিক মামলা বিচারাধীন ৬০ হাজার ৯২৫টি। পাঁচ বছরের অধিক সময় বিচারাধীন ৫ হাজার ৭৩৪টি। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ৯৫টি। অর্থ মামলা বিচারাধীন ১০ হাজার ২৫৪টি। পাঁচ বছরের অধিক সময় বিচারাধীন ৩ হাজার ২৩৫টি। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ৯১টি। অর্থ ঋণ মামলা বিচারাধীন ৪০ হাজার ৮৭৯টি। পাঁচ বছরের অধিক সময় বিচারাধীন ২ হাজার ৩৪৫টি। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ৩২৫টি। নির্বাচনী মামলা বিচারাধীন রয়েছে ১ হাজার ২৫টি। পাঁচ বছরের অধিক সময় বিচারাধীন ৫৬টি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত ২০টি। সূত্র জানায়, ঢাকা জেলার ৪০টি আদালতে দেওয়ানি ১ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৫টি, আর ফৌজদারি ৪ লাখ ২৪ হাজার ৬৭৯টি মামলা বিচারাধীন। ঢাকার দ্বিতীয় অর্থ ঋণ আদালতে ১২ হাজার ১৪৭টি মামলা ঝুলে আছে। তৃতীয় অর্থ ঋণ আদালতে ঝুলে আছে ১১ হাজার ৭০টি মামলা। চতুর্থ অর্থ ঋণ আদালতে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা ৬ হাজার ৪৬৩টি। প্রথম অর্থঋণ আদালতে রয়েছে ৪ হাজার ১৮২টি মামলা। ৪টি আদালতে ৫ থেকে ১০ বছরের পুরোনো মামলা ১ হাজারেরও বেশি। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন আলোচিত মামলাগুলোর মধ্যে আছে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের রিভিউ, পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যা, পিলখানা হত্যা, শিশু রাজিব ও রাকিব হত্যা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল, পার্বত্য শান্তি চুক্তির কয়েকটি ধারা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে করা আপিল এবং মেয়ের হাতে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলা। আর উচ্চ আদালতে (হাইকোর্টে) নুসরাত জাহান রাফি হত্যা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, হলি আর্টিজান হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান হত্যা এবং রমনা বটমূলে বোমা হামলাসহ বেশকিছু মামলা ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে মামলাজট নিরসনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মামলা জট নিরসনে দ্রুতত শুনানির উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। রাষ্ট্রপক্ষকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাজট কমিয়ে আনা সম্ভব। এ লক্ষ্যে আইনও সংশোধন করা হয়েছে। তবে কাক্সিক্ষত সুফল এখনো মেলেনি। আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর লাগছে।