শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ বাস্তবায়ন ও বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ জুন) বেলা ১১ টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কলেজের অধ্যক্ষ ও বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম খান।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম অধিভুক্তি লাভ করে। প্রতিষ্ঠাকাল বিবেচনায় বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলো ২০২২ সালে ৩০ বছর পূর্ণ করেছে। তৎকালীন সময়ে মাত্র ৮/১০টি সরকারি টিটি কলেজ যখন বিপুল সংখ্যক মাধ্যমিক শিক্ষকদের পেশাগত বিএড প্রশিক্ষণ দিতে হিমশিম খাচ্ছিল তখন বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠা ছিল সময়ের অনিবার্য দাবি। কিন্তু সরকার যে উদ্দেশ্যে এই কলেজগুলো প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দিয়েছিল তার ছন্দোপতন ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়। কিছুকিছু মানহীন কলেজের ব্যর্থতার কারণে সারাদেশে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোর প্রশিক্ষণের মান নিয়ে জাতীয়ভাবে বিতর্কের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পর্যবেক্ষণ টিম সারাদেশের বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোকে পরিদর্শন করে প্রশিক্ষণের মান নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। প্রশিক্ষণের গুণগতমান বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন টিম ৩৮টি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে লাল তালিকাভুক্ত করে তা বন্ধের সুপারিশ করে। কিন্তু ৩৮টি কলেজ থেকে ২৩টি কলেজ আদালতে মামলা করার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কলেজকে আর বন্ধ করতে পারেনি। উপরন্ত কলেজগুলোকে প্রতি বছর নবায়ন দিয়ে দিয়ে ছাত্র ভর্তির সুযোগ করে দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
আর ২০০৮ সালে আদালতে করা মামলার রায়ও বের হয় ২০১৫ সালে। ওই রায়ে বলা হয়, ইতোমধ্যে ওইসব কলেজ থেকে যারা পাশ করেছে তাদেরকে এমপিও স্কেল দিতে হবে। কিন্তু কলেজগুলোর বর্তমান-ভবিষ্যৎ নিয়ে আদালত কোনো প্রকার পর্যবেক্ষণ না দিলেও কলেজেগুলোর মালিক পক্ষ একটি অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার করে বেড়ায় যে, তাদের ২৩টি কলেজ ছাড়া অন্য কলেজ থেকে বিএড করলে তাদের সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। অথচ আদালতের রায়ে এমন কোনো নির্দেশনা ছিল না।
সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত আরও প্রায় ৭০টি কলেজ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় তাদের এমন দাবি নি:সন্দেহে অবাস্তব, উদ্দেশ্যে প্রণোদিত এবং যা আদালত অবমাননার শামিল। কেননা মহামান্য হাইকের্টের রায়ে বলা হয়- আদালতের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা করে ২০১৯ সালে মাউশি থেকে সেই ২৩টি কলেজ ব্যতীত মামলার বাইরে থাকা অন্যান্য মনসম্পন্ন কলেজ থেকে অর্জিত বিএড সনদের বিপরীতে উচ্চতর স্কেল প্রদান না করতে সকল জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নিষেধ করা হয় (স্মারক নং ওএম ০১-ম/২০১৫/২১৮০, তারিখ ১৪/০৫/২০১৯ খ্রি.) তখন মানসম্পন্ন কলেজগুলোর জোর তৎপরতায় ২২/৫/২০১৯ তারিখ এই আদেশটি মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাতিল করতে বাধ্য হয় মাউশি (স্মারক নং ওএম-০১-ন/২০১৫/২২৬১)। এমতাবস্থায় লাল তালিকাভুক্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের পুন অপতৎপরতায় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার সহযোগিতায় ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর স্মারক নং ৩৭.০০.০০০০.০৯৪.৫৯.০০১.২১.১০২ তে আবারও সেই ২৩টি কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীদের সনদের বৈধতা নিযয়ে প্রশ্ন তোলা হয়- কেবল ২৩টি কলেজকেই সরকারের অনুমোদিত কলেজ বলে দাবি করা হয়।
২০২২ সালেল ১৮অক্টোবর আবারও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে একটি পক্ষপাতমূলক আদেশের মাধ্যমে ২৩টি কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীদের বিএড স্কেল প্রদান না করার জন্য আরেকটি তাগাদাপত্র ইস্যু করা হয় (স্মারক নং ৩৭.০০.০০০০.০৯৩.৫৯.০০১.২১.৩১৩)। তখন সারাদেশের বৈধ কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের বিএড সনদের বিপরীতে উচ্চতর বেতনস্কেল প্রাপ্তি নিয়ে বেশ জটিলতা তৈরি হয়। ওই প্রেক্ষাপটে বিগত ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর বিষয়টি মাননীয় শিক্ষা সচিবের নজরে আনা হলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হয়ে আইন শাখা থেকে পূর্বে জারিকৃত ২টি আদেশই বাতিল করেন। যার স্মারক নং শিম/আইন সেল (রীট)-৬/সাতক্ষীরা/২০০৯/২৩, তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, আদেশ ২টি বাতিল হওয়ার পরও রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই আদেশ বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। ক্ষেত্রবিশেষ বিএড স্কেল প্রত্যাশীদের আবেদনগুলো সেই লাল তালিকাভুক্ত ২৩টি কলেজের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ফলে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন মানসম্পন্ন কলেজ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষা অফিসের এমন অনৈতিক আচারণের জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই আদেশ বাস্তবায়নের জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে।
এই বিষয়ে রাজশাহী জেলা আঞ্চলিক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, তাদের কোন কাজ বা কাগজপত্র পাঠাতে এখানে কোন গাফলতি নেই। সবকাজ করা হয়েছে এবং তারা এমপিও ভূক্তও হয়েছেন বলে দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, অধ্যক্ষ রাহাতুল আবকা, অধ্যক্ষ রুবীনা আক্তার বানু, আরজুমান্দ বানু, রওশন আরা রশীদ, নন্দা রানী ঘোস, ফরহা খান, স্বপন কুমার সাহা, সিনথিয়া হোসেন, আসাদুল কবির, জান্নাতুল ফেরদৌস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।