হুট করেই একটু মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। কেভিন সিনক্লেয়ারকে স্লগ করতে গিয়ে বল তুলে দিয়েছিলেন আকাশে। কিন্তু মিড অন ফিল্ডার কিছুটা পেছনে ছুটে গিয়েও ফ্লাইট মিস করে বসেন। ৭২ রানে জীবন পান জয়। এর একটু আগে সিনক্লেয়ারের বলেই সহজ ক্যাচ দিয়ে ৭ রানে বেঁচে যান ইয়াসির আলি চৌধুরি। এই দুজনের জুটিতেই শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বাঁচানোর পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ইয়াসির পরে আউট হলেও অসাধারণ অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ড্র নিশ্চিত করেই ফেরেন জয়। সিরিজ জুড়ে বারবার ব্যর্থ ব্যাটিং লাইন আপ শেষ পর্যন্ত নিজেদের মেলে ধরতে পারল সিরিজের শেষ দিনে। দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে তারা ড্র করতে পারল তৃতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্ট। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শুক্রবার বাংলাদেশ ‘এ’ ৪ উইকেটে ৩০৬ রান করার পর ড্র হয় ম্যাচ। সিরিজের ছয় ইনিংসে এই প্রথম তিনশ ছুঁতে পারল তারা। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিও ড্র হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় ম্যাচের জয়ে সিরিজ জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল। ম্যাচ বাঁচানোর কঠিন পরীক্ষায় ৭ ঘণ্টা লড়াই করে বাংলাদেশের নায়ক জয়। ২৬৮ বলে ১১৪ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে ম্যাচের সেরা তিনি। ইয়াসির আউট হন ৬৭ রানে। জয় ও জাকির হাসানের উদ্বোধনী জুটি আগের দিনই লড়াইয়ের সূচনা করেছিলেন। শেষ দিনেও তারা দলকে এগিয়ে নেন অনেকটা দূর। দুজনই সাবধানী ব্যাটিংয়ে সময় কাটাতে থাকেন ক্রিজে। আলগা বল পেলে বাউন্ডারিতে পাঠাতেও ভুল করেননি দুজন। ৯৩ রানের এই জুটি ভাঙে সিনক্লেয়ারের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে। তার তীক্ষ্ণ টার্ন ও বাড়তি বাউন্সে জাকির হাসান আউট হন ৯৫ বলে ৪৩ রান করে। এরপর মুমিনুল হককেও দ্রুত হারায় বাংলাদেশ। সিনক্লেয়ারের জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে পেছনের পায়ে খেলে এলবিডব্লিউ হন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের আগে প্রস্তুতির জন্য এই ম্যাচে খেললেও তা কাজে লাগাতে পারলেন না অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। দুই ইনিংসেই আউট হলেন ৫ রান করে। জোড়া ধাক্কা দল সামাল দেয় জয় ও সাইফ হাসানের ব্যাটে। জয় আগলে রাখেন এক প্রান্ত, সাইফ রান তোলেন বেশ দ্রুততায়। ৫৩ রানের জুটি শেষ হয় সাইফের বিদায়ে। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৮ করে আউট হন তিনি শট খেলার চেষ্টায়। আকিম জর্ডানের বাউন্সারে চার মারার পরের বলে আপার কাট করে ধরা পড়েন পয়েন্ট সীমানায়। তখনও পর্যন্ত দল একটু নড়বড়ে থাকলেও শঙ্কা কেটে যায় পরের জুটিতে। ৩০ ওভারের বেশি ক্রিজে কাটিয়ে দুজন যোগ করেন ১১৭ রান। ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে জয় ফিফটি করে ১১৩ বলে। একই গতিতে খেলে পরের পঞ্চাশ করতে খেলেন ১১০ দল। অ্যান্ডারসন ফিলিপের বলে টানা দুটি বাউন্ডারিতে পা রাখেন তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চতুর্থ সেঞ্চুরিতে। ইয়াসির ক্রিজে যাওয়ার পরপরই ছক্কা মারেন সিনক্লেয়ারকে। জীবন পাওয়ার পর এই অফ স্পিনারের বলেই ছক্কা মারেন আরেকটি। ভিরাসামী পেরমলের ওভারে দুটি বাউন্ডারিতে ফিফটি করেন ৬০ বলে। ৪ ছক্কায় ৬৭ রান করে শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হন সিনক্লেয়ারের ফ্লাইট ও টার্নে পরাস্ত হয়ে। তবে বাংলাদেশ ততক্ষণে অনেকটাই নিরাপদ। বাকি সময়টুকু অনায়াসে পার করে দেন জয় ও শাহাদাত হোসেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ১ম ইনিংস: ৪৪৫
বাংলাদেশ ‘এ’ ১ম ইনিংস: ২০৫
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ২য় ইনিংস: ২২০/৫ (ডি.)
বাংলাদেশ ‘এ’ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪৬১, আগের দিন ৪৭/০) ৯১ ওভারে ৩০৬/৪ (জয় ১১৪*, জাকির ৪৩, মুমিনুল ৫, সাইফ ৩৮, ইয়াসির ৬৭, শাহাদাত ২০*; জর্ডান ১৪-২-৩৭-১, রিফার ১২-৩-৩৬-০, সিনক্লেয়ার ২৭-৫-৯৪-৩, ফিলিপ ১২-০-৪৯-০, পেরমল ২২-৭-৫৪-০, আথানেজ ৪-০-৪৪-০)।
ফল: ম্যাচ ড্র।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ১-০তে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহমুদুল হাসান জয়।