সম্পত্তির ব্যবধান কমিয়ে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা না গেলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও গণতান্ত্রিক কাঠামোটিই ভেঙে পড়তে পারে। ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। প্রতিবারের মতো এবারের বাজেটেও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির চাপ থাকছে। তবে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত। বর্তমানে নগদ অর্থ বা আর্থিক বিনিয়োগসহ অস্থাবর সম্পদের ওপর কর আদায়ের ব্যবস্থা থাকলেও স্থাবর সম্পদের ওপর কর আদায়ের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। তাই রাজস্ব আয় বাড়াতে গিয়ে সম্পদের ওপর এমন হারে যাতে কর নির্ধারণ করা না হয়, যার কারণে করদাতা ভয় পেয়ে যান বা কর দিতে নিরুৎসাহিত হন।
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সম্পদ কর গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে সারা বিশ্বের সর্বত্র স্বীকার্য। অথচ বাংলাদেশে বার্ষিক রাজস্ব আয়ের মাত্র দশমিক ৫ শতাংশের কম আসে সম্পদ কর থেকে। অর্থাৎ যে রাজস্ব আয় দিয়ে একটি দেশ চলে, তাতে সম্পদ করের বলা চলে কোনো ভূমিকাই নেই। তার মানে ধনীদের অধিকারে থাকা সম্পদের ওপর কর প্রযুক্ত হচ্ছে না। কিন্তু দেশ চালাতে যেহেতু রাজস্ব দরকার, সেহেতু সেই রাজস্ব তোলা হচ্ছে প্রধানত সাধারণ মানুষের পণ্য কেনার ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের মধ্য দিয়ে। এতে বৈষম্য উত্তরোত্তর বাড়ছে। যে দেশে যত মাথাপিছু আয় বাড়ে, সেখানে তত সম্পদ কর আদায় বাড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে তা হচ্ছে না। এ কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবে বছরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার বাড়তি সম্পদ কর আসছে না। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিষয়টি বিবেচনা করে সম্পদ কর আহরণ বাধ্যতামূলক ও অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, নতুন অর্থবছরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করতে চাইছে সরকার। বিশেষ করে দেশীয় শিল্পে এতদিন যে ছাড় দেওয়া হয়েছে সেগুলো ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে চাইছে এনবিআর। তবে এবার কর্পোরেট কর পরিবর্তন হচ্ছে না। এবার রিটার্ন দাখিলেও কর আরোপ হতে পারে। তবে ব্যক্তি শ্রেণির করের পরিমাণ আগের মতোই থাকছে। কেননা আমাদের দেশে ধনীদের কর ছাড় দিয়ে বৈষম্য বাড়ানো হচ্ছে আর সেই বোঝা চাপানো হয় গরিব এবং মধ্যবিত্তের ঘাড়ে। তবে এসব কর আদায় ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হওয়া দরকার। অর্থনৈতিক এই পরিস্থিতিতে ভ্যাটের হার বাড়ালে হয়তো রাজস্ব আসবে; কিন্তু এই চাপ পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। ছাড়া ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করে নিলেও পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এই চাপও ভোগ করতে হবে সাধারণ মানুষকে। এতে দেখা যাচ্ছে সম্পদ করে সুবিধা পাঁচ্ছেন ধনীরা।