নওগাঁর মহাদেবপুরে একজন কথিত সাংবাদিকের কুকীর্তিতে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। একের পর এক বিতর্কীত কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে সে এখন ট্যক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সে নানান অনাচার করে চললেও চক্ষু লজ্জার খাতিরে মানুষ তাকে কিছু বলেননি। কিন্তু এখন এর প্রতিবাদ করা শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি দি হাঙ্গার প্রজেক্টের পিউপল এগেইনস্ট ভাইয়োলেন্স পেভ এর পিস ফ্যাসিলেটেটর গ্রুপ পিএফজি কমিটিতে তার অন্তর্ভূক্তিতে এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এনিয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে চলতে থাকে চাপা ক্ষোভ। এর প্রতিবাদ করেও কোন কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তারা। গত ২৭ মে জেলার বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে পিএফজি মহাদেবপুর উপজেলা কমিটির নবনির্বাচিতদের উদ্যোগে আয়োজিত পিকনিকে এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। ওই কথিত সাংবাদিককে এই কমিটি থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান অন্য সদস্যরা।
জানতে চাইলে মহাদেবপুর উপজেলা পিএফজি কমিটির সিনিয়র এ্যামবাসাডর ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শ্রী অজিত কুমার মন্ডল জানান, ওই বিতর্কীত ব্যক্তিকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে লিভ টুগেদারের অভিযোগ করা হয়েছে। এখনও সে প্রকাশ্যে পরকীয়ায় লিপ্ত রয়েছে। প্রায়ই ওই পরকীয়া যুগলকে এলাকার বিভিন্ন ঝোপ ঝাড়ে সময় কাটাতে, মার্কেটিং করতে, অফিস আদালতে একসাথে কাজ করতে এমনকি মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে ঝগড়া করতে ও ধাওয়া করতেও দেখা যায়। সাংবাদিকতার দোহাই দিয়ে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে তার পরকীয়া প্রেমিকাকে বিভিন্ন অফিস থেকে নানান সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে দেয়ারও অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় একটি সরকারি অফিসে তাকে প্রায় প্রতিটি ট্রেনিংয়েই অংশ নিতে দেখা যায়। একটির বেশি ট্রেনিং নেয়ার বিধান না থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সাংবাদিকের সুপারিশের জন্যই এসব সুযোগ দেন বলে জানান একজন কর্মকর্তা। কোন কোন ক্ষেত্রে ট্রেনিংয়ে নিয়মিত উপস্থিত না থাকলেও তাকে ট্রেনিংয়ের পুরো ভাতা দেয়া হয়।
মহাদেবপুরের সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক ভোরের কাগজ প্রতিনিধি গৌতম কুমার মহন্ত, দৈনিক যায়যায়দিন প্রতিনিধি ইউসুফ আলী সুমন, দৈনিক মানব কন্ঠ প্রতিনিধি সোহেল রানা, মহাদেবপুর দর্পণ.কম এর বার্তা সম্পাদক কাজী সামছুজ্জোহা মিলন প্রমুখ সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন যে, কথিত ওই সাংবাদিক নিজে কোন সংবাদ লিখতে না জানলেও প্রভাব খাটিয়ে একটি সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতির পদ ধরে রেখেছেন। ওই সংগঠনের শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য রয়েছেন। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মচারিদের হাত করে নিয়মিত প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের চিঠি গ্রহণ করছেন। গত সপ্তাহে নওগাঁয় প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের সাথে সাংবাদিকদের মত বিনিময় সভায় যোগদানের জন্য উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তিন জন সাংবাদিককে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এই উপজেলায় সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠনের মধ্যে একটির ১৮ জন ও অন্যটির ১৯ জন সদস্য থাকলেও কথিত ওই সাংবাদিকের সংগঠনের সদস্য সংখ্যা মাত্র দুই। অথচ ওই দুই জনকেই সেই মতবিনিময় সভায় যোগদানের সুযোগ করে দেয় উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মচারি। এনিয়ে অন্য সাংবাদিক সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান জানান, কোন সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৮ এর কম হলে তাদেরকে কোন চিঠি দেয়া হবেনা।
এছাড়া ওই কথিত সাংবাদিকের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী সাংবাদিক নামধারীদের নামে উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরের বিজ্ঞাপন বন্টন করা হয়েছে। ফলে প্রকৃত সাংবাদিকেরা তাদের পাওনা বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি কোন কোন বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিকে যার নামে পত্রিকায়ই নাই। যে পত্রিকার নামে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে তিনি সে পত্রিকার প্রতিনিধিই নন। জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী সৈকত দাস জানান, এখন থেকে প্রকৃত সাংবাদিকদের এবং সংশ্লিষ্ট পত্রিকার প্রতিনিধিদেরকে বিজ্ঞাপন দেয়া হবে।
এলাকাবাসী ওই কথিত সাংবাদিকের দীর্ঘদিনের নানা কীর্তির কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, সম্পর্কে মিলেনা এমন এক নারীর ঘরে রাত কাটাবার সময় গ্রামবাসীর হাতে আটক হয় ওই কথিত সাংবাদিক। তার স্ত্রী সেখানে গিয়ে তার বিচার দাবি করেন। কিন্তু ওই ইউপির তদানিন্তন চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় ছাড়া পায় সে। তার বিরুদ্ধে তার বাসার কাজের মেয়ে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দেয়। কিন্তু মোটা টাকার বিনিময়ে বাদিনীর সাথে ওই মামলা আপোশ করে। পরকীয়া প্রেমিকার বড় বোনের সাথে দিনের বেলা একা ভাড়া বাড়িতে একঘরে শুয়ে থাকার সময় মহল্লাবাসী তাদেরকে আটক করে উত্তম মধ্যম দিয়ে ওই বাসা থেকে বের করে দেয়। আর এক নারীকে নিয়ে নিজের বাড়ির নিজের ঘরে সময় কাটাবার সময় খবর পেয়ে থানা পুলিশ সেখানে যায়। তাদেরকে একসাথে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেন। পরে ঊর্ধ্বতন মহলের মধ্যস্থতায় সে যাত্রায় রক্ষা পায় সে। কিছুদিন আগে বিদেশী মদ ভর্তি বোতল আর গ্লাসসহ তার ছবি বিভিন্ন জনের ম্যাসেঞ্জারে ভাইরাল হয়। এখন আবার তার পরকীয়া প্রেমিকাকে চুম্বন করার ছবি ভাইরাল হয়েছে। এনিয়ে এলাকায় চলছে ছি: ছি: রব।