জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগের টানা ১৫ তম এবং দেশের ৫২ তম বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মুস্তফা কামাল। গত ১ জুন সংসদে ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। এবারে তার বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ছিলো, ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড়। বাজেটটি ৫০ লাখ ছ’হাজার ৬৭২ কোটি টাকার প্রাকলিত জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ। এবারের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দু’লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক দু’শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লাখ দু’হাজার ৪৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব হিসাবে ৫ লাখ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংগ্রহ করবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে আরও ৭০ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা আগামী অর্থ বছরের চেয়ে ৬৭ হাজার কোটি টাকা কম। এবারের বাজেটটি আসন্ন নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। সেজন্য প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবারের বাজেটেও কিছু ইতিবাচক বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। পাশাপাশি নতুন কিছু ইতিবাচক বিষয়ও যুক্ত হয়েছে। এবারের বাজেটে ব্যক্তিগত আয় সীমা বাড়ানো হয়েছে, নিত্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে কিছু ভাতা বাড়ানো হয়েছে। সাথে পরিসরও বাড়ানো হয়েছে। এবারের বাজেটে কার্বন করসহ এমন কিছু কর আরোপ করা হয়েছে, যা অনেক আগেই প্রয়োজন ছিল। ফ্ল্যাট ও জমি রেজিস্ট্রেশন ফ্রি, দ্বিতীয় গাড়ি কেনা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে এগুলো এবারের বাজেটের ইতিবাচক দিক। এর সাথে নেতিবাচক কিছু দিকও রয়েছে এ বাজেটে। চলমান সময়ে অর্থনীতির যে দাবি তা কি এই বাজেট পূরণ করতে পারবেন? আমাদের অর্থনীতির এখনকার দু’টি বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি ও সমস্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা। মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে দেখা যায় ৮ থেকে ৯, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের কাছাকাছি উচ্চ মূল্যস্ফীতি এক বছরের বেশি সময় থেকে বিরাজ করছে। এটা বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে নিম্ম আয়ের মানুষের জীবন যাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বাজেটে বলা হয়েছে, কিন্তু কি করে তা মোকাবেলা করতে হবে, তার কোনো দিক নির্দেশনা নেই। সামস্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় বিশেষ করে রাজস্ব আদায়, আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতির অন্যান্য খাতে যে সংকট রয়েছে সেগুলো সামাল দেওয়ার জন্য কি করা উচিৎ, সে ব্যাপারে কোনো দিক নির্দেশনা দেখা যাচ্ছে না। আয়কর সীমা যেটা বাড়ানো হয়েছে, তা যথেষ্ট হলেও এর সাথে কিছু সাংঘষিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারি ৪৪ টি সেবা পাওয়ার জন্য কেউ যদি ব্যক্তি আয়কর সীমার বাইরেও থাকেন, তাকেও দু’হাজার টাকা দিতে হবে। এটি কে অর্থনীতিবিদরা অনৈতিক বলছেন। কাজেই বাজেট পাশের সময় এ প্রস্তাব প্রত্যাহার করা জরুরি।