ভিক্ষাবৃত্তি কখন কোন সময় হতে প্রচলিত বা শুরু হয়েছে তার কোন সঠিক ইতিহাস জানা যায় না। যারা সম্পদ অর্জন করতে পারে না বা নিজের ও পরিবারের ভরণপোষণ বহন করতে পারে না তাদেরই ভিক্ষুক বলে গণ্য করা যায়। দেশে ভিক্ষাবৃত্তি বর্তমানে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তিকে স্থায়ী বা অস্থায়ী পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে। ফলে দেশে দিনেদিনে ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে ৫০ হাজার ভিক্ষুক রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে এর সংখ্যা ৩ লাখ এবং সারাদেশে ৭ লাখ। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় রাজধানীতে পেশাদার ভিক্ষাবৃত্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অর্ধশত ভিক্ষুক কল্যাণ সমিতি। এসব সমিতির সদস্য হয়ে এবং নিয়মিত চাঁদা দিয়ে পেশাদার ভিক্ষুকরা রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলির মোড়ে, কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান, চায়ের দোকান, বিপণি বিতান, সড়ক ও ট্রাফিক সিগন্যাল, মসজিদ, বাস, ট্রেন, লঞ্চ টার্মিনাল, এটিএম বুথ, শপিং মলের সামনে নির্বিঘ্নে ভিক্ষা করছে। এমনকি এই বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে এলাকাভিত্তিক ভিক্ষুক সিন্ডিকেট এবং লাইনম্যানও গড়ে উঠেছে। ২০১০ সালে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করে সরকার। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন করা হয় ঢাকার সাত এলাকা। পদক্ষেপ নিলেও মাঠ পর্যায়ে তা প্রয়োগের অভাবে ওইসব এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত করা যায়নি। ভিক্ষাবৃত্তির রয়েছে নানা রকমফের, নানা শ্রেণিভেদ। শুধু যে শারীরিক প্রতিবন্ধী, কর্ম-অক্ষম অভাবতাড়িতরাই ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত, তা নয়। অনেকে কাজ করার শারীরিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষাবৃত্তিকেই সহজ জীবিকা হিসেবে বেছে নিচ্ছে। আবার অনেকে গ্রামে আর্থিক অবস্থা ভালো থাকা সত্ত্বেও শহরে এসে ভিক্ষা করছে। দেশে এইসব ভুয়া ভিক্ষুকের সংখ্যাই বেশি। দেশে ভিক্ষাবৃত্তি পুনর্বাসনের জন্য ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। বিভিন্ন সময় ভিক্ষুকমুক্ত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পুনর্বাসনের জন্য বিপুল সংখ্যক ভিক্ষুককে আটক করা হলেও ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা না থাকায় বেশীরভাগ সময়ই তাদের ছেড়ে দিতে হয়। ফলে কোন ভাবেই কমানো যাচ্ছেনা ভিক্ষুকদের সংখ্যা। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য রাষ্ট্র ও প্রশাসনকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশকে ভিক্ষাবৃত্তি মুক্ত করা সম্ভব। ভিক্ষার মূল কারণ হলো দারিদ্র, তাই প্রথমে দারিদ্র দূর করা তথা দারিদ্র সীমার নীচে বাস করা লোকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সবার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে ভিক্ষুকদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যারা পেশাদার ভিক্ষাবৃত্তি করছেন, তাদের পুনর্বাসন করা সম্ভব নয়। কারণ দেখা যায় তারা কিছুদিন পরই পুনর্বাসনকেন্দ্র থেকে পালিয়ে যায়। ফলে প্রকৃত ভিক্ষুক শনাক্ত করতে হবে ও ভুয়া ভিক্ষুকদের শাস্তির ভিতর আনতে হবে এবং আইন প্রয়োগের ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে। আর তাহলেই ধীরেধীরে ভিক্ষাবৃত্তির হার কমে আসবে।