রাজধানীর প্রায় সব স্থানে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও তাদের আনাগোনা বেশি থাকে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তাদের প্রয়োগ করা নেশা জাতীয় দ্রব্যের বিষক্রিয়ায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়ছেন যাত্রীরা। অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের মাঝেমধ্যে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ গ্রেপ্তার করলে আবার কয়েকদিন পর তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। বিদেশ থেকে যারা আসেন,তারা পরিবারের জন্য মোবাইল, গয়না, ঘড়িসহ মূল্যবান উপহার-সামগ্রী নিয়ে আসেন। এছাড়াও প্রবাসীদের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা ও দামি জিনিসপত্র থাকে। বিদেশ থেকে প্রতি দিন কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ দেশে ফেরেন। ফলে এক জায়গায় বেশি মানুষের আনাগোনার মাঝে টার্গেট খুঁজে পেতে বিমানবন্দরে আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়েছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। এক সূত্রে যানা গেছে, চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা বিভিন্ন পেশার আড়ালে গত ১৫ বছর ধরে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাস ফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করেন। এটি মূলত তাদের একটি কৌশল। বিমানবন্দরের পার্কিং এলাকায় তাদের আনাগোনা বেশি। সেসব যাত্রী একা একা গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি ফেরেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদেরই টার্গেট করে থাকে এই চক্র। বিদেশফেরত যাত্রীদের সঙ্গে প্রথমে খোশগল্পে মেতে ওঠে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। তারপর নানা ধরনের কথা বলে যাত্রীদের আস্থা অর্জন করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বন্ধু হয়ে ওঠে। যাত্রী যখনই বলছেন, তার বাড়ি নোয়াখালী, তখন অজ্ঞান পার্টির ওই সদস্যের বাড়িও নোয়াখালী কিংবা লক্ষ্মীপুর হয়ে যায়। আর যাত্রী যদি বলেন, তার বাড়ি সিলেট। তখন অজ্ঞান পার্টির সদস্যরাও বলে তাদের বাড়ি সিলেট কিংবা শ্রীমঙ্গল এলাকায়। অর্থাৎ বিদেশফেরত যাত্রী যে এলাকায় যাবেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরাও ওই একই এলাকায় যাবার কথা বলে। এভাবে বিদেশফেরত যাত্রীর সঙ্গে অল্প সময়ে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করে তোলে প্রতারক চক্র। কখনও গাড়িতে ওঠার আগে, কখন গাড়িতে ওঠার পর জুস,পানি কিংবা কোমল পানীয় খেতে দেয় তারা। আর তা খেয়ে বিদেশফেরত যাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে মালামাল লুটে নিয়ে কেটে পড়ে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। সুতরাং বিমানবন্দরে আরও অধিক হারে বাড়ানো দরকার গোয়েন্দা নজরদারি। বিভিন্ন মাধ্যমে যাত্রীদের সচেতন করতে প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। অন্যদিকে মুহূর্তের পরিচয়ে কাউকে বিশ্বাস করলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে যাত্রীদের সচেতন হতে হবে। অপরিচিত মানুষের সঙ্গে শেয়ারে গাড়ি ভাড়া করাও ঝুঁকিপূর্ণ। একইসঙ্গে বাস, ট্রেন, গাড়ি যেখানেই হোক না কেন, অপরিচিত মানুষের দেওয়া পানি, খাবার গ্রহণ করা যাবে না। কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলে, কিংবা ভুক্তভোগী হয়ে গেলে, পুলিশকে অভিযোগ জানাতে হবে। বিদেশ ফেরত যাত্রীদের এসব বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। তাহলে এ ধরনের প্রতারক চক্র কারও ক্ষতি করতে পারবে না।