মাদারীপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে। এতে নারীসহ অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জেলা মাদারীপুর সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক শ শিক্ষার্থী ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মস্তফাপুর গোলচত্বরে অবস্থান করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতেই মাদারীপুরের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছিলেন। এ সময় মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভ কর্মসূচির শুরুতে পুলিশ বাধা দিলেও মহাসড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরাতে পারেনি। একপর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের মারধর করেন এবং ব্যানার ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পাল্টা হামলা চালানোর চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের হামলায় নারীসহ পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হন।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ হাওলাদার বলেন, কোটাকে ইস্যু করে মাদারীপুরে সাধারণ ছাত্র বেশে বিএনপি-জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধী লেবাসধারী কিছু ছাত্র নৈরাজ্য ও অরাজকতা সৃষ্টি করতেই মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে এলাকাবাসী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। যানচলাচল স্বাভাবিক করে দেয়। এখানে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চলাতে থাকেন। অন্যদিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেন পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
মাদারীপুরে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের অন্যতম সমন্বয়ক আলভী নাহিয়ান আবৃত বলেন, ‘সারা দেশে ছয় জন আন্দোলনকারীর নিহতের প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলাম। হঠাৎ পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এক হয়ে আমাদের লাঠিপেটা শুরু করেন। তাঁরা ব্যানার ছিনিয়ে নেন, নারীদের ওপর হাত তোলেন। হামলায় আমরা কয়েকজন আহত হয়েছি। আমরা পথ ছাড়িনি, আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছি। ছাত্রলীগের এই হামলায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, মহাসড়কে কোটা সংস্কারের অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ সকাল থেকেই মহাসড়কে অবস্থান করে। শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করলে তাঁদের প্রথমে বোঝানো হয়। পুলিশের চেষ্টায় অনেক শিক্ষার্থী মহাসড়ক ছেড়ে দিলেও অনেকেই আবার মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। এ সময় কোটার পক্ষের কিছু লোক তাঁদের ছাত্রভঙ্গ করে দেন। এখানে আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি ঘটেনি। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত। মহাসড়কে যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে।
এছাড়াও জেলার শিবচর উপজেলার পদ্মা সেতুর দক্ষিনপাড় মহাসড়কে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক শ শিক্ষার্থী এবং ডাসার উপজেলার শশিকর কলেজের শিক্ষার্থীরাও ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।