মোর পোলা ৮ম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় অভারের কারণে প্রায় ৭/৮ বছর আগেই পড়ালেখা ছাইডা দেয়। পোলাটা তো চাকরী চায় নাই। পোলাটা রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। হেই পোলাটার বুকটারে পুলিশ গুলি কইরা ঝাঁঝরা করে ফেলাইছে। ইউরোপের দেশ ইতালিতে পাঠাবো বইলা পোলার জন্য ১ লাখ টাকাও জমা দিছি। ইতালি চাইয়া আমাগো অভাবের সংসারে একটু হলেও সুখে-শান্তিতে রাখবো, দুই মুঠো ভাল-মন্দ খাওয়াইবে। হেই আশা মোর পূর্ন হইলো না। মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত শুক্রবার পুলিশের গুলিতে নিহত রাজমিস্ত্রী তাওহীদ সন্যামাতের মা রেশমা বেগম মাটি চাপড়ে আহাজারি করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলে। রেশমা বেগম আরও বলেন, ‘মোর বাবাটাকে পুলিশ গুলি করিয়া মারল ক্যান? ওতো কাউকে মারতে যায় নাই। পোলাটা তো চাকরী চায় নাই? সেই কথা বলে বিলাপ করছিলেন মা রেশমা বেগম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের রাজমিস্ত্রী সালাউদ্দিন সন্যামাতের ছেলে মোঃ তাওহীদ সন্্যামাত (২০)। গত ২০১৮ সালে ৮ম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় পরিবারে অভাবের কারণে পড়ালেখা ছেড়ে বাবার সাথে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। বাবা-ছেলের আয়ের টাকায় চলতো তাদের সংনার। সালাউদ্দিন সন্যামাত ও স্ত্রী রেশমা বেগমের পরিবারে ৩ পুত্র সন্তান নিয়েই সুখে-দুখে দিন কাটাচ্ছিলেন। ৩ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মোঃ আসাদ সন্যামাত একজন কুরআনে হাফেজ। ২য় ছেলে মোঃ তাওহীদ সন্যামাত বাবার সাথে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে সংসার খরচ চালাতেন। ছোট ছেলে মোঃ ইয়ালিদ সন্যামাত পাশ^বর্তী বড়বাড্ডা নামে একটি গ্রামের হাফিজিয়া ও নূরানীয়া মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত। তাওহীদ ফুটবল খুবই ভালো খেলতো। কিন্তু অভাবের সংসার, কাজ করবে না খেলবে তাই বেশি দূর আর আগাতে পারে নাই।
পুলিশের গুলিতে নিহত তাওহীদ সন্যামাত (২০) এর বাড়িতে এখনো বইছে শোকের মাতম। পুত্র শোকে মা রেশমা বেগমের বিলাপে ভারী আকাশ, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সান্ত¡নায় মনের ভেতর দাউ দাউ করে জ¦লন্ত আগুন নিভৃত হচ্ছে না। এমনই এক নিশব্দতা, নীরবতা এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে তাওহীদের পরিবারে।
শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা বৃদ্ধ বাবা ছেলে হত্যার বিচার চান। পানি ভরা চোখ নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া বাবা সালাউদ্দিন বলেন, কিভাবে কি হয়ে গেল। এখন কি হবে। আমার সংসার কিভাবে চলব। আমাদের যে জমিজমা বলতে কিছুই নাই। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির শূন্যতায় এই পরিবারটি একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। তাই পরিবারটির হাল ধরতে এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গসহ সরকারের প্রতি আকুতি জানান তারা। পরিবারটি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয় বলে জানান এলাকাবাসী।