পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু বর্তমানে দেখা গেছে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান করে নিয়েছে। সবজি, মাছ, তরিতরকারি কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা পলিথিন ব্যবহার করছি। অনেক সময় কাগজের ব্যাগ কিংবা পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও প্রতিনিয়ত পলিথিন ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়ায় আমরা সেই পথে আগাতে পারছি না। পলিথিন সামগ্রী জনগণের হাতে হাতে। পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রের রন্দ্রে রন্দ্রে এই পণ্যের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনে আছে, পলিথিনের উৎপাদনকারীর জন্য ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে প্রথমে বছর দুয়েক এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকলে ও পরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানা কারণে উদাসীনতা প্রদর্শন করতে থাকে। আর সে সুুযোগে পলিথিনের উৎপাদন, বিক্রি এবং ব্যবহার পুনরায় শুরু হয়ে যায়। পলিথিন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। শহরের অধিকাংশ পরিবার খাদ্যদ্রব্য পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে ফ্রিজে রাখে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, পলিথিনে মোড়ানো খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করলে খাদ্যদ্রব্য এক ধরনের অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার কবলে পড়ে। এর ফলে আমরা মারাত্মক চর্মরোগসহ ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছি। এ ছাড়া বর্তমানে আমাদের অসচেতনতার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্লাস্টিক দূষণের নতুন নতুন উৎস তৈরি হচ্ছে। পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় এর পরিত্যক্ত অংশ মাটির অভ্যন্তরে ঢুকে মাটির উর্বরতা হ্রাস ও মাটিতে থাকা অণুজীবগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। পলিথিন শুধু মাটির গুণাগুণ নষ্ট করছে তা-ই নয় বরং বিপন্ন করে তুলছে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশকেও। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজধানীর ৬৪ শতাংশ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। তার মধ্যে শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। অপচনশীল ও সর্বনাশা পলিথিনের এমন যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বিশেষ করে বর্ষাকালে নগর-মহানগরে পয়োনিষ্কাশনের ড্রেন, নালা, নর্দমা, খাল, বিল ও নদীগুলো ভরাট হচ্ছে আর দূষিত হচ্ছে পানি। পরিত্যক্ত পলিথিন মাটিতে বীজের শিকড় প্রসারিত হতে বাধা সৃষ্টি করে। মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে দেয় না। ফলে কোনোভাবে গাছ বেঁচে থাকলেও তাতে ফল ধরে না। ফল ধরলেও তা নিম্নমানের। যে এলাকায় মাটির গভীরে পলিথিন আছে সেখানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করলে ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এর ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে মাঝেমধ্যে এর বিরুদ্ধে অভিযান চালালে হবে না। এটা নিয়মমাফিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেখান থেকে পলিথিন উৎপাদন হচ্ছে সেসব কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সাথে কাগজের প্যাকেট আর পাটের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।