দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা করার মাত্র প্রায় তিন ঘন্টার মধ্যেই পলায়ন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেশ পলায়নের দৃশ্য দেখা গেলেও সেই দলের প্রভাবশালী অন্যতম নেতা সিটি মেয়র লিটন হঠাৎ করেই কোথাই গায়েব হয়ে গেলো তা সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। অথচ, এদিন সোমবার দুপুরেও মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে আয়োজিত দলটির সহযোগী সকল সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্যেশে দেওয়া ভাষনে কথা দিয়েছিলেন আপনাদের কোন ভয় নাই, সরকার বিরোধী আন্দোলনকারীদের যতক্ষন দমন করতে না পারবো ততক্ষন জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা রাজপথ ছাড়বো না। সে সময় প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী ক্যাডারদেরকে গ্রেপ্তার না করে তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছিলেন পুলিশ প্রশাসন। ওই সময় নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের একাধিক সদস্য এই প্রতিবেদকের কাছে নিজের পোষাকের অবমাননা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের অসৎ কিছু কর্মকর্তার কারণে পুলিশ বাহিনীর বদনাম হচ্ছে বা আমাদের ওপর আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হচ্ছে। তারা বলেন, প্রকাশ্যে অস্ত্রনিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালালেও তাদের গ্রেপ্তার করার বিপরীতে আমরা সহযোগিতা করছি। যে কারণেই পুলিশ বাহিনীর প্রতি এবার দেশবাসীর আস্থা একেবারেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর এমন ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে পরিস্থিতি যে কোন মুহুর্তে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে। ঠিক যেমন কথা তেমন কাজ, এমন কথোপকথনের একপর্যায়ে মুখোমুখি সরকারবিরোধী হাজার হাজার শ্রেনী পেশার মানুষ। যে জনশ্রতের সামনে পড়লে আর রক্ষা নেই বলেই কিছুক্ষণ আগে দলটির নেতাকর্মীদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভুলে পুলিশের সহযোগিতায় পলায়ন করেন রাসিক মেয়র লিটন। এরপরই রাজপথে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা লিটনের প্রকৃত রুপ দেখলেন। যেন মুহুর্তের মধ্যেই সারা দেশের মতো পাল্টে গেলো রাজশাহী নগরীর দৃশ্যপট। শুরু হয় ত্রীমূখী সংঘর্ষ। যে সংঘর্ষের একটি পক্ষ আওয়ামী নেতা-কর্মী ও পুলিশ এবং অপর পক্ষ সরকারবিরোধী জনশ্রোত। ঠিক একই সময়ে নগরীর তালাইমারি ও আলুপট্টিসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী নেতা-কর্মী ও পুলিশের সাথে সরকারবিরোধীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনার খবর আসতে থাকে। যে সংঘর্ষে সাকিব আঞ্জুম নামে একজন নিহত ছাড়াও প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক আহতের খবর পাওয়া যায়। রাজপথ পুরোপুরি দখলে নেয় সরকারবিরোধীরা। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রায় ৩০ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রতিবেদনটি লেখা অবস্থাতেও নগরীসহ রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগি সংগঠনের ব্যানারে থাকা এমপিদের অফিস, বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের খবর।