হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়িয়েছে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, সোনাগাজী, দাগনভ্ঞূা, ছাগলনাইয়াসহ বিভিন্ন এলাকা। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি। এখনো হাজারো মানুষ পানিবন্দিী অবস্থায় রয়েছে এসব জায়গায়। এমন পরিস্থিতিতে এসব এলাকা পুরোপুরি ববিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে মোবাইল নেটওয়ার্কও। বিবিসি বলছে- বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। বন্যায় সেখানে এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে সেখানকার বিপর্যয় মোকাবেলা দপ্তর। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের ত্রিপুরার ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট বা ডম্বুর গেট খুলে দিয়েছে ভারত। ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতীর জেলা প্রশাসক তরতড়িৎান্তি চাকমা তার সরকারি এক্স একঅ্যাকাউন্টেএ কথা জানিয়েছেন। ফেনীর নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, এই এলাকায় ১৯৮৮ সালের পর বন্যা পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়নি আগে কখনো। আমার এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয় থাকেন ফেনী শহরে। তিনি আমাকে জানান- পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সবার কল্পনার বাইরে। এখন অনেক মানুষ পানিতে আটকা পড়েছে। তাদেরকে উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড। ভারি বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, খোয়াই, ধলাই, মুহুরী, হালদা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা তা অব্যাহত থাকতে পারে। বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে মাঠে নামিয়েছে বলেও জেনেছি। জেলা প্রশাসন-এর উদ্দেশ্যেযে আমার অনুরোধ- দয়া করে জনবল বাড়ান, মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু বাঁচানোর জন্যও পদক্ষেপ নিন। তা না হলে কিন্তু বাড়বে গবাদি পশু মৃত্যুর কারণে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা। তবে, একথা সত্য যে, বন্ধু দেশ ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আন্তরিক প্রয়াস না থাকায় বাঁধ খুলে দেয়ার মত ঘৃণ্য কাজটি করায় ফেনীর যে সব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তার অনেকগুলো সীমান্ত এলাকা। পরিস্থিতি এতটাই দ্রুতই খারাপ হয়েছে গেছে। সামাল দিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা দুর্গত এলাকায় পানি-বন্দীদের উদ্ধারে কাজ করছে বলেও জানতে পেরেছি গণমাধ্যমের কল্যাণে। দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত থাকতে হবে বাংলাদেশের সকল সচেতন নাগরিককে। কেননা, নেই বিদ্যুৎ-নেটওয়ার্ক, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ। অগাস্টের শুরুতেই মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি অংশে ভাঙনের দেখা দিলেও তখন দেখা দেয়নি। কথায় কথায় কেন আমরা প্লাবিত হই? জানেন তো- ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের ১০ ফোঁড়। অনেকসময়ই দাবি উঠেছে, কিন্তু ভারতের বাঁধের পাশে একটি নিরাপত্তা বাঁধথ দেয়ার উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ্থ হয়েছে ৫৪ বছরের প্রতিটি সরকার। প্লাবিত কেবল ফেনী বা কুমিল্লা নয়, গত কয়েকদিনে টানা বৃষ্টির পাশাপাশি ঢলের পানি বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। এই সকল এলাকায় শুধু মুখে নয়, কাজে যুক্ত থাকতে হবে বাংলাদেশের সচেতন-স্বেচ্ছাসেবি ও দেশপ্রেমীি ভাই-বোনকে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন- পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। পুরুষরাই সব করবে ভেবে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই আমাদের মা-বোনদের। সবাই মিলে আসুন নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা কবলিতদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে যাই রেসকিউ অপারেশন ও ত্রাণ বিতরণের লক্ষ্যে। ভারত থেকে আসা উজানের নদীগুলোর বাঁধ খুলে দেওয়ায় নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, সিলেট ও খাগড়াছড়িসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কবলে পড়েছে। একই সঙ্গে, দেশের উত্তরাঞ্চলেও বন্যার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, সারা দেশে স্ব স্ব অবস্থান থেকে রেসকিউ অপারেশন এবং ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি চালু জজরুরিহয়ে গেছে। আসুন সবাই এগিয়ে যাই দেশ ও দশের কল্যাণে। বড় বড় কথা নয়, বড় বড় কাজে যুক্ত থাকি চলুন সবাই। সেই সাথে বেদনার সাথে বলতে চাই- ‘সম্পদ বা অর্থ কিন্তু তাদেরও ছিলো, যারা পালিয়েছে গণভবনের মত আরামদায়ক ভবন ফেলে।’ আজ যখন সারাদেশে সাধারণ মানুষ বন্যা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছেন, তখন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল শ্রীনগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে থেমে থেমে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নারী ও কিশোরসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলি ও টেঁটার আঘাতে আহত হন কমপক্ষে ৩০ জন। বৃহস্পতিবার ভোরে সায়দাবাদ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এদিন বেলা ১১টার দিকে নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খান নুরউদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর। নিহতরা হলেন শ্রীনগর এলাকার দিরুজা বেগম (৩৫), জুনাইদ মিয়া (১৫), আনিস মিয়া (৩০) ও আমির হোসেন (৭০)। নিহত ৪ জনের দুজন সাবমিয়া গ্রুপের এবং বাকি ২ জন কোন গ্রুপের তা জানা যায়নি। গণমাধ্যমের কল্যাণে জেনেছি- শ্রীনগরের সায়দাবাদ বাজার দখলকে কেন্দ্র করে গত ২ মাস ধরে একই এলাকার হানিফ মাস্টার গ্রুপ এবং সাবমিয়া গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দেশ-জনতার জন্য নতুন প্রজন্মের রাজনীতি-শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি সচেতন নাগনিক হিসেবে বলবো- দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে চলুন নিবেদিত হই নিজের জন্য-পরিবারের জন্য-সমাজের জন্য-দেশের জন্য। মনে রাখতে হবে- বাংলাদেশে বন্যা-প্লাবন প্রতিরোধে দেশের সবার ভূমিকা প্রয়োজন। এককভাবে সরকার যেমন এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবে না, ঠিক তেমনি দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষেও এই বিশাল দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। চাই দুর্নীতিবাজ সরকারের পতনের পর, সবার দায়িত্ব দেশকে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হবে এখনই, প্রমাণ দিতে হবে দেশের মানুষকে ভালোবাসারও প্রমাণ...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি