সম্প্রতি টানা বৃষ্টি এবং ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানির ঢলে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে আকস্মিক তীব্র বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়। ক্রমেই বন্যা ছড়িয়ে পড়ে দেশের ১১টি জেলায়। ফলে বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি। এখনো লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এটি স্মরণ কালের ভয়াবহ বন্যা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১১টি জেলার ৭৩টি উপজেলার ৫৪৫টি ইউনিয়ন-পৌরসভা বন্যায় প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বন্যায় ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। বাংলাদেশের মানুষ সম্মিলিতভাবে বন্যা মোকাবিলা করছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো এই বন্যাকে কেন্দ্র করে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি, তথা খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা; যা হুমকি সরূপ দাঁড়িয়েছে। বন্যায় প্লাবিত সব জেলাতেই ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চল অর্থাৎ চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার জেলায় প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ফেনীর প্রায় শতভাগ জমির ফসলই পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে আমন বীজতলা, আমন আবাদ, বোনা আমন, আউশ আবাদ, শাকসবজি, পান, ফলবাগান, আদা, হলুদ ও আখ। এই অঞ্চলের চাষ হয়েছে এমন ফসলি জমির পরিমাণ ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩৪৯ হেক্টর। এর মধ্যে গত ১৬ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি ও বন্যায় মোট ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এই ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যা-পরবর্তী সময়ের কৃষি নিয়ে একটি সুপরিকল্পিত রোডম্যাপ করাটা জরুরি হয়ে পড়ছে। নয়তো দেশে খাদ্য সংকট এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এমনিতেই উর্ধ্বগতিতে চলছে। তার উপর এর বন্যায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। সুতরাং বন্যার এই ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব যেন খাদ্য মূল্যস্ফীতির উপর না পড়ে সেদিকে লক্ষ রেখে সরকারকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করতে হবে। যেসব অঞ্চলের পানি নামতে সময় নেবে, সেসব অঞ্চলে ভাসমান বা দাকোপ বীজতলা তৈরির কৌশলগত প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করছি কৃষির এই ক্ষতি মোকাবেলায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সঠিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।