দিনের পর দিন সড়কে প্রাণহানির মহোৎসব চলছে অথচ জনগণ সতর্ক হচ্ছে না। তাহলে সড়কে নিহত হওয়ার কারণ কি আমাদের অসতর্কতা? নাকি নিজে বেঁচে গেলাম এমন মতাদর্শ লালন করে সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীনতা? সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশন’-এর তথ্য মতে- ২০২৩ সালে ৫ হাজার ৩৭১টি দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫২৪ জন নিহত হয়েছে; আহত হয়েছে ৭ হাজার ৪৬৮ জন। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ মারা যায় মোটরসাইকেলে আরোহণ করে। এ ছাড়া ২০২৩ সালে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলারে আরোহী কিংবা চালক নিহত হয় মোট মৃত্যুর ৫৭ শতাংশ; যা প্রতিদিনকার গড়ে ১৭ জন সড়কে নিহত হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কাগজে-কলমে সড়ক আইন থাকলেও বাস্তবে তার লক্ষণ নেই। যার ফলে সড়কে মৃত্যুর ঝুঁকি কমছে না বরং বাড়ছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যে কাজগুলো করা প্রয়োজন- সড়ক নিরাপত্তার জন্য বাজেট বাড়ানো ও তা প্রয়োজনে ব্যবহার করা, রোড সাইন (ট্র্যাফিক চিহ্ন) স্থাপন, জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন, গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা, অনিয়ম চাঁদাবাজি রোধ, ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রেনিং একাডেমি স্থাপন করা। সড়কে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারের অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে। রাস্তায় চলাচলকারী বাসগুলোকে আধুনিক ও যাত্রীবান্ধব করতে হবে। সুনির্দিষ্ট করতে হবে বাসস্ট্যান্ডের স্থান। একটি বাসও যেন নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে গিয়ে রাস্তার ওপরে যাত্রী ওঠাতে না পারে, সেদিকে কঠোর নজর দিতে হবে। রাজধানীতে চলাচলকারী অধিকাংশ বাসই দৃশ্যত লক্কড়-ঝক্কড়, রংচটা ও ভাঙাচোরা। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী এসব বাসের মেয়াদ চলে গেছে একযুগ আগে। প্রচলিত আইনে ২০ বছরের পুরোনো বাস ও ২৫ বছরের পুরোনো ট্রাক চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই আইন মানছে না কেউই। বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে চলাচলকারী ৮১ হাজার ৮৪৭টি বাস-মিনিবাসের মধ্যে ৪১ শতাংশের বয়স ২০ বছরের বেশি। এর সঙ্গে একযুগ যোগ করলে বাসগুলোর বয়স দাঁড়ায় ৩০ বছর। বিশে^র কোনো দেশে এটি কল্পনাও করা যায় না। সেইসাথে দক্ষ চালকের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে। গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী-পথচারীদের ট্র্যাফিক আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। বিআরটিএ ও সরকারের তদারকি বাড়াতে হবে। ‘সড়ক নির্মাণ আইন-২০১৮’র সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রিকশা চলাচলের বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে। ট্র্যাফিক বিভাগ বারবার বলছে, স্বল্পগতির বাহন রিকশার কারণে রাজধানীতে অটো সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা যাচ্ছে না। একটি আধুনিক শহরে এ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারে না। রিকশা চালু রেখে আধুনিক নগরীর স্বপ্ন কোনোদিনই বাস্তবায়ন হবে না। মূল নগরী বাদ দিয়ে শহরতলি এলাকার অলিগলিতে মানবিক কারণে এই অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।