ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের একাধিকবারের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী র.আ.ম.উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, এমপি নজিবুল বাশার মাইজ ভান্ডারী, এড. জিয়াউল হক মৃধা ও উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমসহ ৩৬৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। নজিবুল বাশার চট্রগ্রামে একটি আসনের একাধিক বারের নির্বাচিত এমপি। শিউলী আজাদ সংরক্ষিত নারী আসনের (৩১২) সাবেক মহিলা এমপি। এ ছাড়াও জেলা উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। চুন্টা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের আবদুল মন্নাফের ছেলে মাওলানা মো: সুলতান উদ্দিন বাদী হয়ে মঙ্গলবার সরাইল থানায় মামলাটি করেছেন। ভিকটিম লিটনের বাড়ি নোয়াগাঁও ইউনিয়নের আইরল গ্রামে। মামলা ও বাদী সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হেফাজত ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ শে মার্চ থেকে আলেম ওলামা তৌহিদী জনতা মিছিল করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ওই বছরের ২৮ শে মার্চ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন সরাইলের কুট্রাপাড়া লাল শালু হোটেলের সামনের মিছিলে লিটন মিয়া অংশগ্রহণ করে। এর আগে আন্দোলনকে প্রতিহত করতে প্রধান আসামি মোক্তাদির চৌধুরীর, নজিবুল ইসলাম মাইজ ভান্ডারি, এড. জিয়াউল হক মৃধা, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ ও এড. নাজমুল হোসেনের নির্দেশে, প্ররোচনায় হুকুমে আওয়ামী লীগ অঙ্গসংগঠন জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের নেতা কর্মীরা বৈঠক করেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে নস্যাৎ করার উদ্যেশ্যে এজহার নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা বিভিন্ন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাইয়া ত্রাসের সৃষ্টি করে। আন্দোলনকারীরা দিক বিদিক দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরূ করে। আসামীদের আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে লিটন মিয়ার শরীরে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। বাদী মাওলানা মো. সুলতান উদ্দিন অন্যান্য লোকজনের সহায়তায় লিটনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময়ে এই ঘটনায় সরাইল থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে রাজি হননি। বাদী ও নিহতের স্বজনদের বিভিন্ন পন্থায় হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ঠাকুর রাব্বী, মহিলা আ.লীগের সভাপতি ও পরপর দুইবারের নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা অরূয়াইলের মো. নাজিম উদ্দিন ভাসানী, উপজেলার ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. ইশতিয়াক আহমেদ বাপ্পি, আ.লীগ নেতা সমর ভৌমিক, এড. মোখলেছুর রহমান,অরূয়াইল ইউপি আ.লীগের সভাপতি মো. আবু তালেব, সাধারণ সম্পাদক এড. মো. শফিকুর রহমান, আ.লীগ নেতা অরূয়াইলের সাবেক চেয়ারম্যান মিজান মিয়া, অরূয়াইল ইউপি যুবলীগের সভাপতি গাজী বোরহান, ইউপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী কাপ্তান মিয়া, শাহবাজপুর ইউপি আ.লীগের সভাপতি খাইরূল হুদা চৌধুরী বাদল, চুন্টা আ.লীগের সভাপতি শেখ মো. হাবিবুর রহমান, নোয়াগাাঁও ইউপি আ.লীগের সভাপতি হামিদুল হক, শাহজাদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আ.লীগের সম্পাদক আছমা বেগম, পানিশ্বর ইউপি আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন প্রমূখ। মামলায় এজহার নামীয় আসামি ৬৭ জন ও অজ্ঞাতনামা আরো ৩ শত নেতা। মামলার ৩ নম্বর আসামি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের দুই বারের সাবেক এমপি এড. জিয়াউল হক মৃধা বলেন, বিষয়টি শুনে স্তম্ভিত হলাম। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। সেই সময়ে আমি এমপি ছিলাম না। বরং ওইদিন হেফাজতের নেতা কর্মীরা কুট্রাপাড়া খেলার মাঠে গরমে ছটফট করছিল। আমি তাদের কষ্ট অনুভব করে ভ্যান গাড়ি ভর্তি করে পানি পাঠিয়েছিলাম। আর আমাকে করল নির্দেশের আসামী। লিটনের স্বজনরা বলছেন তারা এই মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না।