প্রচণ্ড গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট লোডশেডিং। ১ লাখ ১০ হাজার সাধারণ গ্রাহক গরমে অতিষ্ঠ। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে। লাগামহীন লোডশেডিং চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে। প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন অনেক এলাকায় রাতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাঁচ্ছেন বলে জানিয়েছেন গ্রাহকেরা। এই অবস্থায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকেরা। পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সুত্র জানিয়েছে, এ উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ থেকে ২০ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে ১০ থেকে ১১ মেগাওয়াট। পল্লীর আওতাধীন প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। পল্লীবিদ্যুৎ জানিয়েছে, তাঁদের বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ২০ মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১১ মেগাওয়াট। ফলে, ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। শহরের উপকণ্ঠ হলদীবাড়ী এলাকার ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী আসাদুল হক বলেন, দোকানে কাজ করা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে এমন হয় টানা দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং চলে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) বলছে, জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন ঘাটতি থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। (নেসকো) পার্বতীপুর কার্যালয় জানিয়েছে, পার্বতীপুর শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ মিলছে ৩ থেকে ৪ মেগাওয়াট। শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। নেসকো’র পার্বতীপুর শহরে বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ৭ মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৩ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং হচ্ছে।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)’র পার্বতীপুর আবাসিক প্রকৌশলী মো: কাওসার বলেন, লোডশেডিং চলছে। শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি হবে আশা করছি। তবে, কবে স্বাভাবিক তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।
দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ জেনারেল ম্যানেজার মো: এহ্তেশামুল হক বলেন, আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাঁচ্ছি। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেক, ফলে লোডশেডিং চলছে। পার্বতীপুরে আমাদের প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক। পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়ে উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলতে পারবেন।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুই ইউনিট বন্ধ
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১২৫ মেগাওয়াটের ২নং ইউনিট ও ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট বন্ধ। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুইটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলা বিদ্যুৎহীন কিংবা লো-ভোল্টেজের কবলে পড়েছে। ৩১ জুলাই থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩নং ইউনিটটির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন বন্ধ। ২৭৫ মেগাওয়াট ৩য় ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১৭০-১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে তাপবিদুৎ কেন্দ্রের ২নং ইউনিটি সংস্কার করার জন্য ওভার হোলিং এর কাজ চলছে। ১২৫ মেগাওয়াট ২নং ইউনিট দিয়ে প্রতিদিন ৭০ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। বর্তমানে ১২৫ মেগাওয়াট ১নং ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ১নং ইউনিটটি চালু রাখতে দৈনিক বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৭শ” থেকে ৮শ’ মেট্রিক টন কয়লা ব্যবহার হচ্ছে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারি প্রধান প্রকৌশলী মো: মহসিন কবির ফিরোজ জানান, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩য় ইউনিটটির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন বন্ধ। আশা করছি দুই একদিনের মধ্যে ৩য় ইউনিটটি চালু হবে। ৩য় ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১৭০-১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। বর্তমান ১নং ইউনিটটি চালু রেখে ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।