দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে চলতি ভয়াবহ বন্যায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৭১ জন। এখনো অনেক এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। ফসল, চাষের মাছ, ঘরবাড়ি-সম্পদ, রাস্তাঘাটসহ বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বন্যায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা নদী ভরাট হয়ে যাওয়া কিংবা নদীর নাব্য না থাকাকেই মূলত দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, দেশের ৯০ শতাংশ নদীই নাব্য সংকটে ভুগছে। বন্যার ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে নদীগুলো খনন করতে হবে। স্বাধীনতার পরও আমাদের অভ্যন্তরীণ নদীপথ ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। বর্তমানে আছে মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। অন্যদিকে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় উজানের ঢল এবং বৃষ্টির পানি নদীগুলো ধারণ করতে পারে না। তখন দুই কূল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তদুপরি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। কখনো বৃষ্টিহীনতা, কখনো একটানা প্রবল বৃষ্টি, যেমনটি সম্প্রতি দেখা গিয়েছিল; এসব কারণে বন্যার ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়ছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল ও সম্পদহানি ছাড়াও বন্যায় সড়ক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব সড়ক মেরামতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। বন্যা থেকে রক্ষা পেতে দ্রুততম সময়ে নদীগুলো খনন করতে হবে। অভিন্ন নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলেও আমাদের নদীগুলোর ভরাটপ্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। তাই ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা চালাতে হবে এবং আন্ত নদী সমস্যার যৌক্তিক সমাধান করতে হবে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, আমাদের নদী ছিল আড়াই হাজারের বেশি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় আছে হাজারের মতো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে, বর্তমানে কোনো রকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে ৪৩০টি নদী। এভাবে নদীর অস্তিত্ব হারানোর পেছনে দখল, দূষণ ও ভরাটপ্রক্রিয়াও বড় ভূমিকা পালন করছে। অতীতে নদী খননের কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে সেগুলো খুব একটা কাজে আসেনি। সেসব কাজে লুটপাট যতটা হয়েছে, খনন ততটা হয়নি। তাই নদীর নাব্যতা সংকট দূরীকরণে প্রয়োজন নতুনভাবে বাজেট প্রণয়ন; দেশের সব নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখলদারি উচ্ছেদ এবং অবিলম্বে সারা দেশে নদী খনন শুরু করা। পাশাপাশি শক্তিশালী ও স্বাধীনভাবে নদী রক্ষা কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইন সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় লোকবলও নিয়োগ করতে হবে। বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে দ্রুত দেশের সব নদী রক্ষা এবং নাব্য করার উদ্যোগ নেওয়া হবে- এটাই প্রত্যাশা।