জোর পূর্বক জায়গা দখল সহ নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করায় ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ও সদস্য মো. মাসুক মিয়ার বিরূদ্ধে চাঁদা দাবীর অভিযোগে মিথ্যা মামলা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা বাচ্চু মিয়া। উপজেলার অরূয়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের অসহায় তিন মহিলার জায়গার দখলকে কেন্দ্র করে এই নাটকের সূত্রপাত হয়েছে। বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য উপজেলা প্রশাসন, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এমন অভিযোগ চেয়ারম্যানসহ ৭ আসামীর। বাচ্চু মিয়া বলছেন আমি আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি করি। মামলায় উল্লিখিত ঘটনার দিনে ও সময়ে এলাকায় ছিলেন না এমন লোকজনকে আসামি করার অভিযোগ করছেন একাধিক ব্যক্তি। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে একই আসামীদের বিরূদ্ধে বাচ্চু মিয়া অনুরূপ একটি মামলা করেছিলেন। ওই মামলাটিও তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছিলেন পুলিশ। পুলিশ বলছেন ঘটনার সময়ে অভিযুক্ত আসামি এলাকার বাহিরে অবস্থান করার সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। তদন্ত ছাড়া কাউকে হয়রানি করা হবে না।
মামলা, আসামি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, অরূয়াইলের ধামাউড়া গ্রামের প্রয়াত হাবেদ আলীর ছেলে বাচ্চু মিয়া। প্রবাসে জেলা শহরে ও গ্রামে মিলেই বসবাস করছেন এই আ.লীগ নেতা। এলাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতে গিয়ে অনেকের সাথেই বিরোধ হয়েছে তার। সম্প্রতি অরূয়াইলের হিন্দু সম্প্রদায়ের পিতা মাতা হারা অসহায় তিন মেয়ের জায়গার দখলকে কেন্দ্র করে বিরোধের সৃষ্টি হয় বাচ্চুর। বিষয়টি নিস্পত্তি করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অনেকেই চেষ্টা করেছেন। একসময় বাচ্চু মিয়াকে দখলে বাঁধা দেন ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া (৪৫) ও সদস্য মো. মাসুক মিয়া (৩০) সহ কয়েকজন। এতে ক্ষিপ্ত হন বাচ্চু মিয়া। তাই বাচ্চু মিয়া বাদী হয়ে চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ও ইউপি সদস্য মাসুদ মিয়াসহ ৭ জনের বিরূদ্ধে চাঁদা দাবী ও মারধরের অভিযোগে গত ৬ সেপ্টেম্বর সরাইল থানায় একটি মামলা করেছেন। অন্য আসামিরা হলেন-ব্যবসায়ি মুখলেছ মিয়া (৩৫), বশারফ হোসেন ভূঁইয়া (৩০), রৌফ মিয়া (৩২), বাবুল মিয়া (৪০) ও আইয়ুব হোসেন (৫০)। মামলায় বলা হয়েছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাচ্চু মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন ক্রয়কৃত ৪ শতক ভিটি ভূমিতে শান্তিপূর্ণভাবে দখলে থাকতে হলে আসামিরা বিশ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেছে। বাচ্চু মিয়া এ বিষয়ে কর্ণপাত না করিলে আসামিরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাকে চারিদিকে ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে তারা বাচ্চু মিয়াকে মারধর করে। অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তি দুই দিনের মধ্যে চাঁদা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। অথচ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলছেন, উল্লিখিত সময়ে আসামীদের অনেকেই অরূয়াইলের বাহিরে ছিলেন। পুলিশ ৩ তারিখে জমা দেয়া মামলাটি তদন্ত না করে কিভাবে এত দ্রƒত নথিভূক্ত করে ফেললেন? চেয়ারম্যান ঘটনার সময়ে ঢাকার গাজিপুরে নিজ বাসায় অবস্থান করার সিসি ফুটেজের ভিডিও পুলিশের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। চেয়ারম্যান বলেন, মুখলেছ ওইদিন সন্ধ্যায় তার নিজের ব্যাংকের অফিসারের সাথে বসে কাজ করছিলেন। প্রমাণ স্বরূপ তারও ভিডিও ফুটেজ আছে। অরূয়াইল বহুমুখি উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক তপন দাস গুপ্ত বলেন, আমি ব্যক্তিগত কাজে ৩ তারিখ ভোরে আইয়ুব হোসেনকে নিয়ে ঢাকায় গেছি। পরের দিন আসছি। আইয়ুব এই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। অরূয়াইল ইউপি আ.লীগের সভাপতি মো. আবু তালেবসহ কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, বাচ্চু মিয়া আওয়ামী লীগই করতো। বিদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে থাকা এলাকায় জায়গা ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করে আসছে। বাচ্চু মিয়া কর্তৃক দায়ের করা চাঁদা দাবীর মামলাটি সঠিক নয়। বাচ্চু মিয়া তার বিরূদ্ধে করা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি বিএনপি করি। তাই অতীতে আ.লীগ নেতাদের অগণিত মামলার আসামি হয়েছি। আমার দায়ের করা মামলার সকল বিষয় শতভাগ সত্য। আমি বিদেশ থেকে আসলেই তারা চাঁদাদাবী করে। আমাকে তারা ষড়যন্ত্রে ফেলে নি:স্ব করে ফেলেছে। মূর্তি ভাঙ্গার মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে ওই চক্রটি। সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল হাসান বলেন, একজন আসামি ঘটনাস্থলের বাহিরে থাকার সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। বিনা কারণে বা অপরাধে কাউকে হয়রানি করা হবে না। যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।