তথ্য প্রযুক্তি এবং আধুনীক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটায় পাবনার সুজানগরে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী ডাক বাক্স আর ডাক পিয়নের কদড় নেই। উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে ডাক বাক্স। সেই সঙ্গে এখন আর ডাক পিয়নেরও খবর রাখেনা কেউ। অথচ বেশি দিন আগের কথা নয়, অধিকাংশ পরিবার প্রিয়জনদের কাছে লেখা একটি চিঠি বা অন্য কোন পত্রাদি ডাক বাক্স বা ডাক পিয়নের হাতে দেওয়ার জন্য বিচলিত হয়ে পড়তেন। পাশাপাশি প্রিয়জনদের খবর জানতে বা তাদের লেখা একটি চিঠি পাবার আশায় সকালে বিকালে ডাক পিয়নের বাড়িতে ছুটে যেতেন। এর পরও যখন আপনজনদের কোন চিঠি বা সংবাদ পেতেন না তখন তারা তাদের সেই চিঠির জন্য ডাক পিয়নকে বার বার অনুরোধ করতেন পোস্ট অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতে। বিশেষ করে ওই সময় যাদের আত্মীয়স্বজন বিদেশ থাকতেন তাদের কাছে ডাক বাক্স বা ডাক পিয়নের কদরই ছিল আলাদা। অবশ্য সে সময় ডাক পিয়নও প্রাপকের হাতে বিদেশী কোন চিঠিপত্র তুলে দিতে বেশ আগ্রহী ছিলেন। কারণ তিনি বিদেশী কোন চিঠি প্রাপকের হাতে তুলে দিতে পারলেই প্রাপক তাকে বকশিশ দিয়ে খুশি করতেন। শুধু চিঠি নয়, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রিয়জনদের পাঠানো টাকা-পয়সা বা অন্যান্য ডকুমেন্টস’র জন্যও ডাক পিয়নের খোঁজ করতে হতো। অবশ্য ডাক পিয়নও তখন তার দায়িত্ব কর্তব্য যথারীতি পালন করতেন। অনেক সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাপকের কাছে তার কাঙ্খিত চিঠিপত্র, টাকা পয়সা বা অন্যান্য ডকুমেন্টস পৌঁছে দিতেন। এ ছাড়া ওই সময় যারা প্রিয়জনের কাছে চিঠিপত্র বা অন্য কোন ডকুমেন্টস পাঠাতেন তারা ছুটে যেতেন কাঙ্খিত ডাক বাক্সের কাছে। ঝড়, বৃষ্টি ও রোদকে উপেক্ষা করে আপনজনের কাছে লেখা চিঠি ডাক বাক্সে পোস্ট করতে পারলে তবেই স্বস্তি। আর তখন ডাক বাক্স গুলোও সব সময় লাল রঙে রাঙিয়ে রাখা হতো। যাতে সহজেই তাতে মানুষের দৃষ্টি পড়ে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধিত হওয়ায় এখন আর প্রিয়জনের কোন খবর জানতে ডাক পিয়নের পথ চেয়ে থাকতে হয়না। প্রিয়জন পৃথিবীর যেকোন প্রান্তেই থাকনা কেন মোবাইল ফোন এবং ইন্টারসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে তার খবর নেওয়া যায়। আর তার সাথে টাকা পয়সা লেনদেন করতেও এখন আর পোস্ট অফিস বা ডাক পিয়নের প্রয়োজন হয়না। নিমিষের মধ্যে বিকাশ এবং অনলাইনসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে টাকা-পয়সা লেনদেন করা যায়। সে কারণে এখন আর মানুষের কাছে ডাক পিয়নের কদর নেই। একই কারণে ডাক বাক্স বা পোস্ট অফিসের গুরুত্বও কমে গেছে। বর্তমানে চাকরি বা অফিসিয়াল চিঠিপত্র লেনদেন ছাড়া পোস্ট অফিস বা ডাক বাক্সের প্রয়োজন হয়না। ফলে ডাক পিয়ন ও ডাক বাক্সের গুরুত্ব একদমই কমে গেছে। কোথাও কোথাও ২/১টি ডাক বাক্স চোখে পড়লেও সেটিতে আর কেউ চিঠিপত্র পাঠায় না। ফলে ডাক বাক্স গুলো অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। উপজেলা পোস্ট মাস্টার আফজাল হোসেন বলেন তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এখন আর কেউ ডাক পিয়ন বা ডাক বাক্সের মাধ্যমে চিঠিপত্র লেনদেন করেন না। সেকারণে ডাক বাক্স বা ডাক পিয়নের গুরুত্ব নেই।