যা ভাবে কিংবা যা দেখে সেটুকুর সবটুকু কোনো ধরনের ভয়ভীতিহীন সংস্কৃতিতে লিখতে পারার অধিকারকেই লেখক/চিন্তকের স্বাধীনতা বলা চলে। অথচ এই অল্পদিন আগেও শব্দ চয়নেও অতিমাত্রায় সতর্ক থাকতে হতো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাত্রই মাসকাল অতিক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন পেশাজীবীদের হরেক রকমের দাবি-ধাওয়া উপস্থাপিত হচ্ছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বঞ্চিত জনতা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে মনের পুঞ্জীভূত দুঃখ-ব্যথা জনগণের সরকারকে জানাতে চাচ্ছে ও যাচ্ছে। তাদের অধিকার ও দাবি অযৌক্তিক বলার সাধ্য নাই তবে সময় ও পদ্ধতিকে যৌক্তিক বলারও উপায় নাই। সবাই খুব বেশি তাড়াহুড়া করছে অথচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথপূর্বক সংস্কারের প্রাথমিক ধাপে কেবল পদার্পণ করেছে। তাদেরকে কিছুদিন সময় দিলে বোধহয় রাজপথে দাবি আদায়ের জন্য নামতে হবে না। বরং তারাই জনবান্ধব চাওয়া অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পূরণ করে দেবে। আমার সোনার বাংলাদেশ নিয়ে তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশার অন্ত নাই। অতীব দুঃখের হলে সত্য, বিগত ৫৩ বছরের শাসনামলে শাসকশ্রেণী যে জঞ্জাল রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রেখে গেছে তা ৫৩ দিনে দূর করা সম্ভব নয়। জন-আকাক্সিক্ষত সরকারকে যৌক্তিক সময় প্রদানের মাধ্যমে এই রাষ্ট্রকে মেরামত করিয়ে নিতে হবে। নৈরাশ্যবাদী নই তবে অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে তারা যাতে আর পূর্বের রীতি পথে, লুটপাট-দুর্নীতিতে, গুম-খুন, আয়নাঘরে, বাক স্বাধীনতা হরণে আবারও মেতে উঠতে না পারে সেজন্য রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার, সংবিধানের পরিবর্তন এবং প্রচলিত কু-নীতির বিলোপ নীতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বারাই ঠিক করিয়ে নিতে হবে। নয়তো যে উদ্দেশ্যে হাজার ছাত্র-জনতার জীবন রাজপথে বিলীন হয়েছে, যাদের অঙ্গহানি হয়ে আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছে কিংবা যারা আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় গোঙাচ্ছে তার ত্যাগ-পরিণতি বিফলে যাবে। এমনকি এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য বিফল হলে, বর্তমান সরকার তাদের প্রস্তাবিত সংস্কার আনতে ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার হরিলুট উদ্যাপনের সুযোগ পাবে। তখন তাদের লাগাম টেনে ধরার মত দ্বিতীয় কোনো কর্তৃপক্ষ থাকবে না। তখন আবারও সরকার স্বৈরাচার হয়ে উঠবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে সে বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা রেখে যাচ্ছি।
প্রথমঃ শিক্ষাখাতে আমূল পরিবর্তন সাধন করতে হবে। পতিত সরকার উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিগত এক যুগে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বনাশ করেছে। কারিকুলাম নিয়ে নয়-ছয়, প্রশ্ন ফাঁস, নকল, শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য পাশের হারের উল্লম্ফন ঘটানো, শিক্ষার্থীর সামনে জাতিসত্ত্বার, মুক্তিযুদ্ধের এবং তৎপরবর্তী সময়ের প্রকৃত ইতিহাস তুলে না ধরা, শিক্ষায় ধর্মের অবমাননার রসদ রাখা, নৈতিকতা চর্চায় শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করার বিষয়ের উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব না দেওয়া, দলীয় ঘরানার কবি-সাহিত্যিকদের গল্প-কবিতা সিলেবাসভুক্ত করা এবং মহৎ কবিতা-সাহিত্য সিলেবাসে না রাখার মত গর্হিত কাজের দ্বারা শিক্ষার্থীদের ম্যোরাল ভিত্তি নড়বড়ে করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের পদে পদে হেনস্তা করা, নির্বাচনকালীন অপকর্মে শিক্ষকদের জড়িত থাকতে বাধ্য করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের অপতৎপরতায় শিক্ষার পরিবেশ বারবার বিঘিœত হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষকদের স্বাভাবিক পদলি-পদায়ন, পদোন্নতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো কোনো শিক্ষক কর্মকালের সবটুকু রাজধানী কিংবা বিভাগীয় শহরের পদায়িত থাকবেন আর কেউ কেউ সব সময় মফস্বলে কিংবা দুর্গম চরাঞ্চলে থাকতে বাধ্য হবেন- এমন বৈষম্য যেন নতুন বাংলাদেশে বিরাজমান না থাকে। শিক্ষকদের সম্মানজনক জীবনমান নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তন কিংবা নতুন পে-স্কেল প্রণয়ন করে বাজার দরের সাথে আয়কে সামঞ্জস্য করার আশু পদক্ষেপ জরুরি।
দ্বিতীয়ঃ একটি জাতির শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যখাতের সুস্থতা বড্ড প্রয়োজন। অথচ বিগত দিনগুলোতে স্বাস্থ্যখাতের চিকিৎসা সম্পর্কিত যন্ত্রপাতির টেন্ডার ও কেনাকাটায় হরিলুট চলেছে। ডাক্তার অনুপাতে রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে ডাক্তারাও চিকিৎসা দিতে দিতে হাঁপিয়ে যান আবার রোগীও কাক্সিক্ষত চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ করে। সেজন্য ডাক্তারের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসককে পদায়নের ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ও যৌক্তিক কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে যাতে সুচিকিৎসা কেবল রাজধানী কিংবা বিভাগীয় শহরকেন্দ্রিক না থাকে। বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল কর্তৃক যাতে রোগীকে জিম্মি করা না হয় সে ব্যাপারে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
তৃতীয়ঃ যদিও দুর্নীতিকে তিন নম্বরের স্থান দিয়েছি তবে দুর্নীতি বিষয়ক আলোচনা সবার শুরুতেই রাখতে হবে। দুর্নীতি তথা ঘুষ, চাঁদাবাজি স্বজনপ্রীতি, লুটপাট কিংবা অর্থপাচার বন্ধ করা না গেলে দেশের মেরুদন্ড শক্ত হবে না। দুর্নীতি বন্ধে সংবিধানের ন্যায়পাল প্রথা কার্যকর করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা না দিলে, দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর না হলে বাকি সব আয়োজন ব্যর্থ হবে। প্রকল্প থেকে কমিশন, পাতি নেতার শতকোটি টাকাার মালিক হয়ে যাওয়া, পিয়নের চারশো কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া, একটি ব্যাংকের অর্ধেক অর্থ এক ব্যক্তি কর্তৃক লুটে নেওয়া এসব প্রথা চিরতরে বন্ধ করতে না পারলে বাকি সবকিছু সংস্কার করেও কোন লাভ হবে না। এই দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা, বলা চলে, জাতীয় সমস্যা দুর্নীতি। এই একটি জায়গা সংস্কার করতে পারলে বাকি ক্ষতগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংস্কার হয়ে যাবে। কাজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোড়ালো দাবি থাকবে, অতীতের দুর্নীতিবাজদের ধরুন এবং শাস্তি দিন। ভবিষ্যতেও যাতে কেউ দুর্নীতি না করে, দুর্নীতি করতে সাহস না পায় তেমন টেকসই কোনো নীতি প্রণয়ন করুন।
চতুর্থঃ চাকুরিতে স্বচ্ছ নিয়োগ, যোগ্য এবং মেধাবীদের নিয়োগ- বিবেকবান মানুষের চিরদিনের প্রত্যাশা। অথচ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সেক্টরে কীভাবে কোটার জালে কিংবা প্রশ্ন ফাঁসে নতুবা সুপারিশে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে তা দৃশ্যমান। রাষ্ট্রের যাবতীয় পদের জন্য কয়েকটি নিয়োগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন। সরকারি কর্মকমিশনকে সংস্কার করে এবং গ্রেডভিত্তিক নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন-২/৩ প্রতিষ্ঠা করা যায় কি-না সেটা খতিয়ে দেখুন। পতিত সরকারের আমলে তুলনামূলক কম যোগ্য অনেক শিক্ষক পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। সবচেয়ে মেধাবীদের পাচ্ছে না শিক্ষা সেক্টর। দলীয় ছাত্রসংগঠনের অনেক পান্ডা ডিউ লেটারে নিয়োগ পেয়েছে পুলিশে। এসব কুপ্রথা চিরতরে বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। গণ-আকাক্সিক্ষত সংস্কারের অন্যতম ক্ষেত্র হোক- চাকুরিতে নিয়োগ ব্যবস্থায়। রাজনৈতিক পদ-পদবী ও পরিচয় জানার জন্য যে ভেরিফিকেশন তা চিরতরে বন্ধ হোক। প্রমোশন ও পদায়নে যাতে বংশের কারো রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচ্য না হয়। বর্তমান সমাজে চাচাতো কিংবা ফুফাতো ভাই/বোনের সাথে সুসম্পর্ক থাকে এমন পরিবার কয়টি পাওয়া যাবে? অথচ তাদের পরিচয়ে কারো অধিকার আটকে রাখলে সেটা নিঃসন্দেহে বর্বরতার শামিল।
পঞ্চমঃ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ছাত্র রাজনীতির দ্বারা অর্জন এবং বর্জন তুলনামূলক মানদ-ে যাচাই করুন। বিগত কয়েকটি সরকারের আমলে ছাত্ররাজনীতি দানবীয় রূপ নিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার, সিট বাণিজ্য, গণরুম সংস্কৃতি, ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য, টেন্ডারবাজি কিংবা মারামারিতে- কোথায় ছাত্ররাজনীতিকদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না? পতিত সরকারের আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করতে, ক্যাম্পাস বন্ধ রাখতে কিংবা মিছিলে যেতে বাধ্য করতে ছাত্ররাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টরাই বেশি ভূমিকা রেখেছে। পূর্ববর্তী সরকার সমূহের আমলেও ছাত্ররাজনীতি অভিজ্ঞতা ও অভিযোগ সুখকর নয়। দুঃখের হলেও সত্য, ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্বে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থাকে অ-ছাত্ররা! ক্যাম্পাসে তা-ব চালায় বহিরাগতরা। কাজেই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ চালু করা অধিক যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতে পারে।
ষষ্ঠঃ মাদকের করাল গ্রাসে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রাম। শহরগুলোতে গড়ে উঠেছে মাদকের বিস্তৃত সা¤্রাজ্য। দেশের অগণিত তরুণ-যুবক মাদকের মরণ থাবায় বিপর্যস্ত। পারিবারিক কলহ-বিচ্ছেদ, সামাজিক অস্থিরতা-অশান্তি এমনকি নির্বাচনকালীন পক্ষ-বিপক্ষ ঘিরে যে মরণ খেলা জমে তার পেছনেও সবচেয়ে বড় ভূমিকা মাদকের। যারা মাদক গ্রহণ করে তাদের ধর-পাকড় করে, শাস্তি দিয়ে মাদকের মূল উৎপাটন করা সম্ভব নয়। বরং যারা মাদকের ব্যবসা করে, মাদক আমদানি করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কারখানার উৎপাদন বন্ধ হলে ভোক্তা ভোগ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের অন্যতম অ্যাজেন্ডা হোক মাদক নির্মূল।
সপ্তমঃ কিশোর-তরুণদের শৈশব রক্ষার জন্য এবং মানবিক বিকাশের লক্ষ্যে দখলকৃত সকল খেলার মাঠ উদ্ধার করতে হবে। স্কুল কলেজে সুবিশাল খেলার মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আকাশ সংস্কৃতির উম্মুক্ততার নামে যাতে অপসংস্কৃতি প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ইন্টারনেট পরিষেবা সহজিকরণ করতে হবে। দেশে যতগুলো পাঠাগার আছে তা সংস্কার করে তরুণ-তরুণীকে মানসিক বিকাশে সুযোগ করে দিতে হবে। প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ পুরোদমে চালু করতে হবে।
অষ্টমঃ কর্মজীবী মায়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছ’মাস হলেও একটি মানবশিশু ছ’মাস বয়সে আরও নরম হয়। আরও বেশি মাকে পাশে দরকার পড়ে। কাজেই সন্তানের অন্তত দু’বছর বয়স পর্যন্ত কর্মজীবী মায়েদের জন্য নৈমিত্তিক ছুটি বছরের ৫০ দিন করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য বাৎসরিক ছুটির ক্যালেন্ডারে এমন কিছু দিবসের ছুটি আছে তা বন্ধ করতে হবে। যে সকল দিবসের প্রয়োগ ও প্র্যাকটিস বাংলাদেশে নাই সেসকল দিবসে ছুটি রাখা রাষ্ট্রের প্রগতির জন্য ক্ষতিকর।
নবমঃ কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা বিন্যস্ত করতে হবে। এক ব্যক্তির কাছে সকল ক্ষমতা অপশাসনের সূত্রপাত ঘটায়। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে, যানজট দূর করতে এবং বিভাগীয় শহরগুলোকে উন্নত করতে মন্ত্রণালয় ভিত্তিক পরিষেবা বিন্যস্ত করতে হবে। উন্নয়ন যাতে পরিবেশের বিপর্যয় না ঘটায়, উন্নয়ন যাতে ব্যক্তি ক্ষমতা ও ব্যক্তি স্বার্থের জন্যে না হয় সে ব্যাপারের কঠোরতা রাখতে হবে। জনগণের কাছে কৈফিয়তের ব্যবস্থা থাকতেই হবে। জনগণের প্রত্যেক পয়সার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।
দশমঃ বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জুলাই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছে তাদের পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। ভাতাপ্রাপ্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসা ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে। এ আন্দোলনে পঙ্গুত্ববরণকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। পতিত সরকারের আমলে যারা দুর্নীতি করেছে এবং তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হবে তাদের অবৈধ উপার্জিত সম্পদ ক্রোক করে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। রাষ্ট্রের ব্যয় এবং ব্যাংকের দায় অভিযুক্ত লুটেরাদের সম্পদ থেকে মেটাতে হবে।
এখন এক স্বপ্নের বাংলাদেশের বুকে রোজ হাঁটি। যেখানে বিটিভিও সত্য সংবাদ প্রকাশ করতে পারে। যেখানে পত্রিকাগুলোতে সাংবাদিকরা মন খুলে লেখে। যেখানে টকশোতে বুদ্ধিজীবীরা সত্যকে আলো এবং মিথ্যাকে সরাসরি কালো বলতে পারেন। এই বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। প্রত্যেক সেক্টরের দুর্নীতিবাজদের তালিকা করে তাদেরকে বিতাড়িত করা হোক। যারা দীর্ঘদিন বঞ্চিত হয়েছে তাদেরকে সামনের কাতারের এনে শপথবদ্ধ করিয়ে রাষ্ট্রের সেবা করার সুযোগ প্রদান করা হোক। প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস এবং তার টিমকে ঘিরে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অনেক স্বপ্ন, বিশাল প্রত্যাশা। বিশ্বের কোথাও এই প্রত্যাশার সকটুকু পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে যেটুকু যৌক্তিক, যেটুকু পেলে একজন নিজেকে স্বাধীন মানুষ বলতে পারে সেটুকু পূরণ হোক। মানুষকে দমনের সকল কালো আইন বাতিল হোক। আমার দেশের টাকা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেবে না- রাষ্ট্রের কাছে এই নিশ্চয়তাটুকু চাই। আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা যাতে মাথায় রাখে ভাত-রুটি কিংবা উন্নয়ন কোনোভাবেই বাক স্বাধীনতার বিকল্প নয়। অন্তর্বর্তী সরকার যাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যাবে তাদেরকে যাতে জনমানুষের আকাক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণে বাধ্য থাকার শপথ পাঠ করিয়ে যায়। ভবিষ্যতে কেউ কোনোদিন বাংলাদেশকে বিপথে পরিচালিত না করুক- সেই প্রত্যাশায়।
কলাম লেখক