কিছু স্বার্থান্বেষী ও অতিউৎসাহী পুলিশ সদস্যের জন্য পুলিশ বাহিনীর আজকের পরিণতি বলে মন্তব্য করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মজিদ আলী।
নবাগত এই পুলিশ কমিশনার বলেন, আবু সাঈদকে কারা গুলি করলো, কিভাবে মৃত্যু হলো, এটি প্রমাণ করার জন্য খুব বেশি সাক্ষীর প্রয়োজন হবে না। এরপরেও আবু সাঈদের হত্যা পরবর্তী সময়ে পুলিশ একটা অপ্রাপ্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করে হত্যাকারী সাজালো- এটি অত্যন্ত লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের নবাগত কমিশনার মো. মজিদ আলী।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আরপিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নবাগত এই পুলিশ কর্মকর্তা এসব কথা বলেন।
আবু সাঈদ তার জীবন উৎসর্গের মধ্য দিয়ে অনিয়মের বেড়াজাল ভেঙে নিয়ম-শৃঙ্খলা তৈরি করতে চেয়েছেন বলে উল্লেখ করে কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ জুলাই আবু সাঈদের মৃত্যু সারা বিশ্ব দেখেছে। সেইদিন আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে না পড়লে ৫ আগস্ট ক্ষমতা থেকে সরকার পড়ে যেত না। বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করা আবু সাঈদ ছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।
আরপিএমপি কমিশনার আরও বলেন, আবু সাঈদ যেভাবে শহীদ হয়েছেন, সেটি দেখে বিশ্বের মানুষ শিহরিত হয়েছে। দেশের মধ্যে বীর আবু সাঈদ ঘরে ঘরে জন্ম নিয়েছে। আবু সাঈদের দৃষ্টান্ত পরবর্তিতে দেশের ইতিহাসে বীর হিসেবে চিহ্নিত হবে- এটি আমার বিশ্বাস। আমি যোগদানের পরেই আবু সাঈদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি এবং পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়েছি।
প্রকৃত পুলিশি দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে আরপিএমপি কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, আমাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এই শহরে বড় করার কিছু নেই। বরং আমি যাতে আপনাদের যথাযথ সেবা দিতে পারি, এজন্য সহযোগিতা করবেন। এখন ছাত্র-জনতার বিপ্লব পরবর্তী পুলিশের যেসব কার্যক্রম চলছে তাতে সবার সহযোগিতা থাকা দরকার। করোনা মহামারিসহ নানাবিধ কাজ করে প্রশংসিত হয়েছে। তবে কিছু স্বার্থান্বেষী ও অতিউৎসাহী পুলিশ সদস্যের জন্য পুলিশ বাহিনীর আজকের পরিণতি। কিন্তু এটা মাথায় নিয়ে সরে থাকলে কিংবা সমাজ থেকে আলাদা থাকলে এই বাহিনীর অস্তিত্ব থাকবে না। সুতরাং আমাদের পিছনে থাকার সময় নাই, চুপ করে থাকার সময় নাই, আমাদের ফিরে আসতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, ফেসবুক পুলিশিং, ধানকাটা পুলিশিং, মানবিক পুলিশিং, লোকদেখানো পুলিশিং, শোঅফ করা পুলিশিং আমি করব না, কথা দিচ্ছি। পুলিশের যা প্রকৃত কাজ তা করতে চাই। মানুষ যাতে স্বস্তিতে ঘুমোতে পারে রাস্তায় চলাচল করতে পারে-এসব নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ। এ সময় পুলিশের কার্যক্রমে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. সায়ফুজ্জামান ফারুকী, উপণ্ডপুলিশ কমিশনার (ডিসি হেডকোয়ার্টার ) মো. আবু বকর সিদ্দীক, উপণ্ডপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা বিভাগ) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান, উপণ্ডপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মেনহাজুল আলমসহ আরো অনেকে।
এ সময় আলোচনায় অংশ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ অপরাধ দমনে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন লিয়াকত আলী বাদল,, মেরিনা লাভলী, জুয়েল আহমেদ, ফরহাদুজ্জামান ফারুক, মাজেদ মাসুদ, তাজিদুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন, রেজাউল করিম মানিক প্রমুখ।