বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হৃদরোগের কারণে হয়ে থাকে। এর আগে এই রোগটি বয়স্কদের মধ্যে দেখা গেলেও বর্তমানে কম বয়সিরাও সহজেই এই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন। কেন এই সমস্যাটি অল্প বয়সেই হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা। দীর্ঘদিন ধরেই একটি অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করলে আপনার প্রাণ পর্যন্ত যেতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন খাবার খাওয়ার সময় আমাদের কিছু কাজ বদণ্ডঅভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই বদণ্ডঅভ্যাসগুলো আমাদের প্রাণও নিতে পারে। তাই খাবার খাওয়ার সময় এসব অভ্যাস ত্যাগ করাই ভালো। চলুন এই প্রতিবেদনে জেনে নেওয়া যাক, প্রতিদিনের এমন কিছু খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে যা আপনার হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই খাদ্যাভ্যাস হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি আরো অনেক গুরুতর রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতেও পারে।
খুব বেশি লবণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কখনই ভালো নয়। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া শরীরের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা সৃষ্টি করে, যা হৃদরোগের একটি বড় কারণ। আল্ট্রা প্রক্রিয়াজাত খাবারে উচ্চ লবণ থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার খাদ্যতালিকায় টাটকা খাবার অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন এবং আপনার খাদ্যতালিকায় লবণের পরিমাণ কমাতে বিকল্প হিসেবে কিছু ভেষজ ও মশলা ব্যবহার করতে পারেন।
খুব বেশি চিনি
অতিরিক্ত চিনি আপনার ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যা আপনার হৃদরোগের একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ। সোডা, ক্যান্ডি, পেস্ট্রি ও অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো সুস্বাদু হতে পারে, তবে সেগুলো সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। এর পরিবর্তে আপনার মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা মেটাতে যতটা সম্ভব ফাইবার সমৃদ্ধ টাটকা ফল খাওয়া উচিত।
স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট
স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতেও বড় ভূমিকা পালন করে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এই কারণেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা লাল মাংস, পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য ও হাইড্রোজেনেটেড তেল থেকে তৈরি খাবার সীমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর পরিবর্তে মনোস্যাচুরেটেড পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবারের বিকল্প বেছে নিতে পারেন। (যেমন- আখরোট, বাদাম, আলিভ তেল ও অ্যাভোকাডো)।
উচ্চ প্রোটিন খাদ্য
প্রোটিন আপনার শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর অত্যধিক পরিমাণ আপনার কিডনি সংক্রান্ত সমস্যাকে ঢেকে আনে। যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মাংস, মাছ, হাঁস-মুরগি ও দুগ্ধজাত পণ্য শুধুমাত্র সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন। এর পরিবর্তে আপনি উদ্ভিদণ্ডভিত্তিক প্রোটিনের বিকল্প বেছে নিতে পারেন। (যেমন মসুর, মটরশুটি ও টফু)। এছাড়াও আপনার যদি প্রায়ই ব্রেকফাস্ট স্কিপ করার অভ্যাস থাকে, তবে এটি আপনার রক্তে শর্করাকে নষ্ট করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই একটি স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট শুধুমাত্র আপনাকে সারাদিন এনার্জেটিক রাখতে সাহায্য করে না বরং দিনের বেলা অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতেও সাহায্য করে। তাই উল্লিখিত অভ্যাসগুলো আপনার রুটিন থেকে বাদ দিন। আপনি হৃদরোগ এড়াতে পারেন এবং সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম ও একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করে দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।