রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় গত দুই দিনের ঝড়ো হাওয়া, গুড়ি গুড়ি ও ভারী বৃষ্টিতে কাঁচা ঘরবাড়ী, গাছপালা রাস্তা-ঘাট, পানবরজ, সবজি খেত সহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার ও রোববার গুড়ি গুড়ি ও মাঝে মাঝে ভারী বৃষ্টির কারণে আলোর মূর্খ দেখা যায়নি, প্রয়োজন কাজ ব্যতীত ঘর থেকে বের হতে পারেনি সাধারন জনগন।
১৫ সেপ্টেম্বর রোববার দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় পানবরজ ভেঙ্গে পড়ে, রাস্তার পার্শ্ব ঘেষে রোপনকৃত সরকারি বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ে, চলাচলের রাস্তা ভেঙ্গে গিয়ে, শীতকালের আগাম সবজি খেতে পানি বেঁধে প্রায় ৫কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের কিশোরপুর পশ্চিম পাড়ার আবুল কালামের ১৫ পুন লগড়ের পানবরজ গত রোববার ভোররাতের ঝড়ো হাওয়ায় ঢলে পড়ে ভেঙ্গে গিয়েছে, এতে তার প্রায় ৯ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ভূক্তভোগী আবুল কালাম।
জয়নগর ইউনিয়নের হরিরামপুর দক্ষিনপাড়ার মকছেদ আলীর তিনকক্ষ বিশিষ্ট টিনের ছাঁউনির কাঁচা ঘর বৃষ্টিতে ঢসে পড়ে ভেঙ্গে গেছে, একই ইউনিয়নে পারিলা পূর্বপাড়া হয়ে মাড়িয়া যাওয়ার রাস্তায় বাচ্চু, ভোলার বাড়ীর পার্শ্বে পাকা রাস্তার ধারের সরকারী বৃহৎ আকৃতির প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা মূল্যের শতবর্ষী কড়াই গাছটি রোববার সকাল ৮ টার দিকে পার্শ্বের পানবরজের ওপর উপড়ে পড়েছে, এতে পানবরজ ও প্রায় পুরো রাস্তা ভেঙ্গে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব্জি খ্যাত এলাকার জয়নগর ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া, বড়গাছি, বেড়া, গগনবাড়ীয়া, বাজুখলশী, কিশোরপুর এলাকার সবজি চাষিরা শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, লাউ সহ আগাম শাকসবজি চাষ করেছেন। গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে প্রতিটির জমিতে পানি বেঁধে যাওয়ায় এবং পানি নিষ্কাশনের পথ না পাওয়ায় গাছগুলো প্রায় মরতে বসেছে। এতে ধরাশায়ী হয়ে গেছেন ওই এলাকার শতশত সবজিচাষী, এতে আমাদের এলাকার কৃষকদের প্রায় ২কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে বলে জানান চুনিয়া পাড়া গ্রামের সবজি চাষি নয়ন আলী।
পৌর এলাকার সিংগা গ্রামের কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, দেড় বিঘা জমিতে আগাম ঢেমনা পেয়াজ রোপনের জন্য জমি তৈরী করেছি এবং ১০ কাঠা জমিতে রোপন করেছি, গত দুইদিনের টানা বৃষ্টিতে তৈরীকৃত জমি নষ্ট হয়েগেছে, এইজমিতে আগামী ১৫ দিনেও পেয়াজ রোপনের উপযোগী হবেনা, আর রোপনকৃত পেয়াজের জমিতে বৃষ্টির পানি বেঁধে থাকার কারণে ওই পেয়াজ গুলোও পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে আমার প্রায় লক্ষটাকার ওপরে ক্ষতি হলো, শুধু আমি নয় আমাদের এলাকায় আমার মতো প্রায় অর্ধ্বশত পেয়াজচাষীদের একই অবস্থা।
পলাশবাড়ী গ্রামের মরিজচাষী বেশারত আলী বলেন, আমি প্রতিবছরের নেই এবারও অন্যের জমি লিজ নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে মরিজ চাষ করেছি, জমি লূজ মূল্য, চাষ, সার, ঔষধ, চারা, সেচ ও পরিচর্যায় এই পর্যন্ত আমার পৌনে দুই লক্ষ টাকা ব্যায় হয়েছে, বাজারে দাম ভালো থাকলে জমি থেকে ৮ থেকে ১০ টাকার মরিজ বিক্রী করার আশা ছিলো, দুই সপ্তাহ থেকে মরিজ বাজারে বিক্রীও শুরু করেছি, করে কিন্তু হটাৎ করে দুই দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি ও ভারী বর্ষনে আমার মরিজের খেতে পানি জমেছে, পানি নিস্কাশনের পথ নেই প্রতিটি জমিতে একই অবস্থা, মরিচের জমি থেকে পানি না নামাতে পারলে একবারে পথে বসবো।
এদিকে টানা দুইদিনের বৃষ্টিতে ঘর থেকে বের হতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। মাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর আকছেদ আলী জানান, পরিবারে ৪জন সদস্যের একমাত্র উপার্জনকারী তিনি। প্রতিদিন ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার পর সাইকেলে কোদাল ও ডালি বেঁধে নিয়ে শহরে যান দিনমজুরি করতে, দিন এনে দিন খাওয়া পরিবার আমার, দুইদিন থেকে কাজে যেতে না পারায় অতিকষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাঁটছে।
দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুন্তলা ঘোষ বলেন, দুই দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে উঠতি ফসলে কিছু সাময়িক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আজ কালের মধ্যে আবহাওয়া ভালো হয়ে গেলে ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।