দেশের আবাসন ব্যবসায় স্থবিরতা বিরাজ করছে। ফ্ল্যাট বুকিং ও বিক্রি কমে যাওয়া এবং ড্যাপ নিয়ে জটিলতায় ত্রাহি অবস্থায় দেশের আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ঢাকায় ফ্ল্যাট বুকিং ও বিক্রি কমে গেছে। অনেক গ্রাহক আগে বুকিং দেয়া ফ্ল্যাটের কিস্তিও নিয়মিত পরিশোধ করছেন না। ফলে ছোট ও মাঝারি আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরের জন্য নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ (২০২২-৩৫ সাল) কার্যকর হওয়ার পর থেকে কমে গেছে আবাসন খাতে নতুন প্রকল্পের সংখ্যাও। ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় আগে ভবনের যে আয়তন পাওয়া যেত, এখন পাওয়া যাচ্ছে ৬০ শতাংশ আয়তন। ফলে জমির মালিকরা আগ্রহী হচ্ছেন না আবাসন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্প করতে। আবাসন খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ড্যাপ কার্যকর হওয়ার পর অধিকাংশ আবাসন প্রতিষ্ঠান নতুন করে জমি পাচ্ছে না। ফলে নতুন আবাসন প্রকল্পও নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ফ্ল্যাট বুকিং ও বিক্রি কমে গেছে। কিন্তু আবাসন ব্যবসায়ীরা ফ্ল্যাট বিক্রির চেয়ে ড্যাপ সংশোধন নিয়েই বেশি চিন্তিত। তাতেই তারা বিপদ দেখছেন। গত দুই মাসে ফ্ল্যাটের বিক্রি গড়ে ৩০ শতাংশে নেমেছে। ফলে অনেক ছোট প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের বেতন ও অফিসের ভাড়া দিতে পারছে না। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গত দুই মাসে দেশে ফ্ল্যাটের চাহিদা কমেছে। তার মধ্যে উচ্চ মূল্যের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের বিক্রি বেশি কমেছে। তবে মাঝারি দামের ফ্ল্যাটের বিক্রি কমেনি, বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। টাকার প্রবাহ বাড়লে ফ্ল্যাটের বিক্রিও বাড়বে। মূলত দেশের ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিবিদদের একটি অংশ সব সময় আবাসনে বিনিয়োগ করে থাকেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আত্মগোপনে আছেন। পাশাপাশি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আবাসনে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করেছে। ফলে বিশেষ ওই গোষ্ঠী বর্তমানে আবাসনে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে নিস্ক্রিয় রয়েছে। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের মতে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত দুই মাসে ফ্ল্যাটের বিক্রি গড়ে ৩০ শতাংশে নেমেছে। অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন ও অফিসের ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্মাণ ব্যয়ের চেয়েও কম দামে কেউ কেউ এক-দুটি ফ্ল্যাট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু আবাসন ব্যবসায়ীদের সামনে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ড্যাপ। নতুন ড্যাপের কারণে প্রকল্পের জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকল্পের নকশা পাস করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। রাজউকের কর্মকর্তারাই ড্যাপ পুরোপুরি বুঝতে পারছেন না। এদিকে ড্যাপ সংশোধন চায় রিহ্যাব। সংগঠনটির মতে, ২০২২-৩৫ সালের জন্য চূড়ান্ত করা ড্যাপ বৈষম্যমূলক ও ত্রুটিপূর্ণ। এর সংশোধন প্রয়োজন। এরই মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরামর্শে সংগঠনটি কী কী সংশোধন চায় তার খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, আবাসন খাতে একধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এই খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি করতে হলে ড্যাপ সংশোধন করতেই হবে। চলতি মাসে ড্যাপ সংশোধন নিয়ে রাজউক চেয়ারম্যানের সঙ্গে রিহ্যাব বৈঠক করেছে।