পণ্য আমদানি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতেই কমতে শুরু করেছে। পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার পর পণ্য আনতে দেশভেদে ১৫ দিন থেকে দুই মাসের মতো সময় লাগে। এর মধ্যে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে কম সময় লাগে। স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলার এক-দুই সপ্তাহের পণ্য হাতে পায় ব্যবসায়ীরা। তবে ভারতের বাইরে অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার পর পণ্য হাতে পেতে দেশভেদে ৩০-৬০ দিন সময় লাগে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পণ্য আমদানির পরিমাণ কমে গেছে। আবার জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে আমদানি কম হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পণ্য আমদানি হয়েছিল ২ কোটি ১১ লাখ টন। সেখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আমদানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সোয়া ৬ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ৯৮ লাখ টনে পণ্য আমদানি হয়েছে। তবে পরিমাণের দিক থেকে আমদানি কমলেও আমদানি খরচ বেড়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে যেসব পণ্য আমদানি হয়েছিল, তাতে ব্যয় হয়েছিল ১ হাজার ১৯৯ কোটি মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এই খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২২৮ কোটি ডলার। ওই হিসাবে আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন আমদানিও রয়েছে। গত আগস্টেপণ্য আমদানি ও আমদানি ব্যয় সবচেয়ে বেশি কমেছে। ২০২৩ সালের আগস্টে ৬২০ কোটি ডলারের সমমূল্যের ১ কোটি ১৪ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। এ বছর একই সময়ে ৬১২ কোটি ডলারের সমমূল্যের প্রায় ৯৩ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়। ওই হিসাবে আগস্টে আমদানি পরিমাণে কমেছে ১৮ শতাংশ। মূলত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা ধীরে চলো নীতিতে চলছে। সূত্র জানায়, আমদানি কমলেও রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামালের আমদানি বেড়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হয় সাড়ে ৮ লাখ টন। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৯ লাখ টন। মূলত পণ্য আমদানি বাড়লে অর্থনৈতিক কর্মকা-ও বাড়ে। বিশেষ করে কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো দেশে শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া। যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়লে বিনিয়োগ বাড়ে। এমনকি বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি বাড়লেও দেশে অর্থনৈতিক কর্মকা- বাড়ছে বলে ধরে নেয়া হয়। আর আমদানি কমলে উৎপাদনসহ অর্থনৈতিক কর্মকা- কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। আমদানিকারকদের মতে, বর্তমানে পণ্য আমদানি কমার যে প্রবণতা রয়েছে তা সাময়িক। সূত্র আরো জানায়, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে কমে গেছে। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থলপথে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান বন্দরে এ প্রভাব দেখা যাচ্ছে। পণ্য আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ও কমে গেছে। গত দেড় মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন। আর রপ্তানি কমেছে ১০ হাজার টন। গাড়ির চেসিস আমদানি কমেছে ১৩০টি। মূলত দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খুলতে কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে শতভাগ অর্থ আগাম পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকেরা পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। ৫ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় দেড় মাসে এই বন্দর দিয়ে ২ লাখ ৫ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৫২৭ মেট্রিক টন। এ ছাড়া গাড়ির চেসিস আমদানি হয়েছে ৭৮১টি। গত বছরের একই সময়ে এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছিল প্রায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। রপ্তানি হয়েছিল ৬৫ হাজার ৬৪৯ মেট্রিক টন পণ্য। এ ছাড়া গাড়ির চেসিস আমদানি হয়েছিল ৯১১টি। ওই হিসাবে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় দুই লাখ টন। রপ্তানি কমেছে ৯ হাজার ১২২ টন। আর গাড়ির চেসিস আমদানি কম হয়েছে ১৩০টি। এদিকে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সচল থাকার সরকারি ঘোষণা থাকলেও বেনাপোল স্থলবন্দরে তা কার্যকর নেই। বর্তমানে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সপ্তাহে ছয় দিন বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম চালু থাকে। সন্ধ্যা ছয়টার পর বেনাপোল ও পেট্রাপোলের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজিব নাজির জানান, শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম যথারীতি চালু থাকে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য সাধারণত রাত ১১টা পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়। আর চাহিদা থাকলে রাত ১২টা পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়। অপরদিকে আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে বর্তমানে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং প্রয়োজন হলে রাত ৭-৮টা পর্যন্ত কার্যক্রম চালু থাকে।