তথ্য অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। তথ্য আমাদের চারপাশের বিশ্বকে জানতে, বুঝতে ও সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে। সারা বিশ্বের সব নাগরিকের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পালিত হয় তথ্য অধিকার দিবস। তথ্য অধিকার জাতিসংঘ স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। ২০০২ সালের ২৬ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়াতে তথ্য অধিকার ও তথ্যের অবমুক্তি আইন বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক বৈঠকে ২৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক জানার অধিকার দিবস বা ইন্টারন্যাশনাল রাইট টু নো ডে হিসেবে ঘোষণা করে। তার পর থেকে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন দেশ এই অধিকার বিভিন্ন নামে অভিহিত করে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশে ২০০৯ সালে গৃহীত হয়েছে তথ্য অধিকার আইন। ব্যক্তির অধিকার আদায়ে তথ্য অধিকার দিবসের গুরুত্ব অনেক। মানবাধিকার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা একটি আদর্শ ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের জন্য খুব জরুরি। ২০০৮ সালের ২০ অক্টোবর তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ, ২০০৮ জারি করা হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ ২০০৮ কে আইনে পরিণত করার উদ্যোগ নেয় এবং ওই অধিবেশনে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ পাস হয়। গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করাও আবশ্যক। তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ দেশের জনগণের দীর্ঘ দিনের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করেছে। তথ্য প্রাপ্তির অধিকার বাক-স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিগণিত। বর্তমান যুগকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণকে নিজ-নিজ দেশের সব ধরনের তথ্য জানার অধিকারের বিষয়ে তাদের সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবস পালন করা হয়। ২০১৫ সালে ইউনেস্কোর নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম তথ্য অধিকার দিবস পালন করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা বিস্তৃত হওয়ায় ডিজিটাল বৈষম্যের কারণে কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে ইউনেস্কো। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস পালন করা হয়। তথ্য অধিকার জনগণের ক্ষমতায়নের একটি মাধ্যম। অবাধ তথ্যপ্রবাহ না থাকলে জনগণের মৌলিক মানবাধিকার আদায় সম্ভব নয়। তথ্য অধিকার আইনে নাগরিকের অধিকার ও প্রাপ্য সেবা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রাপ্তির ক্ষমতা নিশ্চিত করে। এক্ষেত্রে নাগরিক সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্যে পেতে আবেদন করতে পারে। তথ্য অধিকার আইন একটি জনকল্যাণকর আইন। যত বেশি তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছবে, তত সচেতনতা বাড়বে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ আছে। দেশের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সব স্তরে দুর্নীতি দূরীকরণের একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে তথ্য অধিকার আইনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য হল একটি বার্তা। একটি বিমূর্ত ধারণা যা জানানোর ক্ষমতা রাখে। আমাদের জীবনে তথ্যের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। তথ্য সামাজিক উন্নয়ন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য আমাদের জ্ঞানভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করে, নতুন কিছু শিখতে ও কী করতে হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তথ্য বিনিময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজে আমরা যা কিছু করি তাতে তথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তথ্য ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব। তথ্য বিনিময় আমাদের নিরাপদ থাকতে, ভালোভাবে বাঁচতে এবং বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। তাই তথ্য আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকাশ ঘোষ বিধান; সাংবাদিক ও কলামিস্ট