প্রবাসীদের যথাযথ সম্মান জানাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এক মাসের মধ্যে বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য ভিআইপি (অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) সেবা চালু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রথম ধাপে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে আসা প্রবাসীরা এটা পাবেন। লাউঞ্জ ও বিশেষ ইমিগ্রেশন ডেস্ক ছাড়া ভিআইপিদের বাকি সব সুবিধা পাবেন প্রবাসীরা। তবে এ ঘোষণার আগেই অনেকটা পরিবর্তন এসেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীসেবায়। আগে ফ্লাইট থেকে বিমানবন্দরে নেমে ইমিগ্রেশনে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হতো। এরপর লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু এখন বিমানবন্দরের চিত্র পুরোই বদলে গেছে। ফ্লাইট অবতরণের অল্প সময়ের মধ্যেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হচ্ছে। বেল্টে যাওয়ার আগেই লাগেজ পৌঁছে যাচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফ্রিতে টেলিফোনে কথা বলতে পারছেন প্রবাসীরা। এছাড়া স্মার্টফোন ব্যবহারকারী যাত্রীরা ওয়াইফাই সংযোগ পাচ্ছেন বিনামূল্যে। পাশাপাশি বিমানবন্দরে কর্মরত সবাই প্রবাসীদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছেন। এতে খুশি এই বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াতকারীরা। শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শাহজালাল বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তাদের রদবদল হয়। মূলত তখন থেকেই বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা বাড়তে থাকে। এখন এই ধারা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, গত আগস্ট থেকে বিমানবন্দরে যাত্রীসেবায় যে পরিবর্তন লেগেছে, তা যেন অব্যাহত থাকে। সে জন্য প্রায় প্রতিদিনই বিমানবন্দর পরির্দশন করি। বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলি, যাতে তারা যাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা দেন। তিনি বলেন, এছাড়া সবাইকে বলেছি, যাতে তারা যাত্রীদের তথা প্রবাসীদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন। একদিন আমি পরিচয় গোপন রেখে যাত্রীদের সঙ্গে ইমিগ্রেশন, লাগেজ সংগ্রহ, চেকিং কার্যক্রম পরির্দশন করেছি। দেখেছি, বিমানবন্দরের সেবায় প্রায় সব যাত্রী সন্তুষ্ট। এখন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বিশ্বমানের সেবা পাবেন যাত্রীরা। এদিকে, শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কল সেন্টার উদ্বোধন করা হয়। এখন দেশের যে কেউ কল সেন্টারে (০৯৬১৪-০১৩৬০০) যোগাযোগ করে সেবা নিতে পারছেন। এ ছাড়া যাত্রীসেবা বাড়াতে একই দিন একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ কল সেন্টারে বিমানবন্দর-সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য জানা যায়। আর পোর্টালে কাস্টমস ডিউটি অফিসারদের নামের তালিকা, ইমিগ্রেশন পুলিশের সেবা, নিরাপত্তা সেবা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার তথ্য, হুইলচেয়ার সেবা, ব্যাংকিং ও মানি এক্সচেঞ্জ সেবা, জরুরি প্রয়োজনে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত সব কর্মকর্তার ফোন নম্বর, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেবা, কোন উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থার কোন উড়োজাহাজ কখন ছেড়ে যাবে, কখন এসে পৌঁছাবে তা ঘরে বসেই জানতে পারছেন যাত্রীরা। তবে গত আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে এসব সেবার প্রচার বেড়েছে। আর বিমানবন্দরে কর্মরত সবার ব্যবহারেও পরিবর্তন ঘটেছে। এদিকে সেবার মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন যাত্রীরাও। তারা বলছেন, চাকরির সুবাদে দীর্ঘসময় প্রবাসে থেকে দেশে ফিরলে সব সময়ই লাগেজ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেক সময় লাগেজ ভেঙে ফেলা হয়েছে। মালামাল চুরির ঘটনাও ঘটেছে। এখন যাত্রীদের তেমন কোনো ভোগান্তি নেই। এমনকি ইমিগ্রেশন পুলিশের যেসব সদস্য আগে গোমড়া মুখ করে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতেন, এখন তাদের ব্যবহার খুবই আন্তরিক। অন্যদিকে, দেশে ফিরে অনেক প্রবাসীর কাছে মোবাইলের সিম থাকে না। পরিবারের কেউ বিমানবন্দরে এলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বা খুঁজে বের করতে কষ্ট হতো। এখন বিমানবন্দরের ভেতরে যাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা স্থানে টেলিফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ টেলিফোন ব্যবহার না জানলে সংশ্লিষ্টরা সহযোগিতা করছেন। এ ছাড়া ফ্রি ওয়াইফাই আছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এমন আন্তরিকতা আগে দেখেনি কেউ। জানা যায়, এখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে দিনে ৩০টির বেশি উড়োজাহাজ সংস্থার ১২০-১৩০টি প্লেন উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব উড়োজাহাজের প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। এ হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে বেবিচক। এদিকে, শুধু বিমানবন্দরের যাত্রীসেবায় পরিবর্তনই নয়, প্রবাসীদের ভোগান্তি কমিয়ে সেবা বাড়ানোর জন্য কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও শ্রম উইং নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আছে। এখন থেকে এটা কঠোর নজরদারির মধ্যে আনা হবে। প্রবাসীদের অভিযোগ ও তার বিপরীতে ব্যবস্থা নেওয়ার চিত্র নিয়মিত প্রতিবেদন আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। কাজ না করলে দায়িত্ব পরিবর্তন করা হবে। দূতাবাস ঠিকমতো কাজ করলে অনেক অনিয়ম দূর করা সম্ভব হবে। বিদেশে কর্মী পাঠাতে তিনটি সংস্থার অনুমতি লাগে, এখন থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আর নিয়োগ অনুমতি লাগবে না। এতে কর্মীদের ভোগান্তি ও সময় কমবে। এ ছাড়া অভিবাসন খরচ বাড়াতে দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ভূমিকা রাখে। তাই দালালদের নিবন্ধন করা হবে। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রিক্রুটিং এজেন্সিকে ক্যাটাগরি সনদ দেওয়া হবে। এতে এজেন্সির মান সম্পর্কে সবাই জানতে পারবে।