আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের পর রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার মুখবদল হয়েছে মাত্র। অন্যদিকে পুলিশ বাহিনীর সবল উপস্থিতি না থাকা এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হওয়ায় সম্প্রতি সীমান্তে চোরাচালান ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, দেশের সীমান্তগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে উঠেছে। জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ভারত সীমান্তঘেঁষা এলাকা প্রায় ৪৪ কিলোমিটার। জেলার পুরো সীমান্তেই চোরাকারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরো বেড়ে গেছে চোরাচালান। এ অবস্থায় কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পুলিশও তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে চোরাকারবারিরাও যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিজিবি গত ১০ দিনে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় পণ্য জব্দ করেছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মাদক, শাড়ি, থ্রি-পিস, মোবাইল ফোনসেট, ফোনের ডিসপ্লে, কসমেটিকস, মহিষ ইত্যাদি। সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরে কেউ প্রথমবার গেলে অবাক হবেন। উপজেলাটিতে পশুপালনের আয়োজন না থাকলেও হাটবাজারগুলো গরু-মহিষে পূর্ণ। চিনিকল না থাকলেও প্রতিদিন এখান থেকে শত শত ট্রাক চিনি সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় নানা ব্র্যান্ডের মাদক। সব কিছু প্রকাশ্যে চললেও প্রশাসন প্রায় নির্বিকার। প্রতিনিয়ত ভারত থেকে অবৈধপথে প্রবেশ করছে গরু, মহিষ, চিনিসহ অন্তত ৩০ ধরনের চোরাই পণ্য। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির কালাচাইন্দা এলাকায় রাত যত বাড়ে, ততই বাড়ে গরু পরিবহন। বেড়ে যায় ট্রাকের চলাচল। এ রকম চিত্র সারা দেশের সব সীমান্তেই কমবেশি দেখতে পাওয়া যায়, যা দেশের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্য বড় শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। সীমান্তে টহল ও নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক দুর্গম সীমান্ত এলাকায় সড়কের অভাবে যানবাহন নিয়ে টহল দেওয়া সম্ভব হয় না। কাঁটাতারের বেড়াও নেই অনেক স্থানে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন সীমান্তে রয়েছে বহু সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটে চোরাকারবারিদের পাশাপাশি রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, এমনকি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সিন্ডিকেটগুলোও কঠোরভাবে দমন করতে হবে।