আমাদের দেশে প্রায় সময় চুরি-ছিনতাই কিংবা নারী হয়রানির ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষ করে রাতের আধাঁরে কিছু চক্র সংঘবদ্ধ ভাবে মানুষদের টার্গেট করে কেড়ে নেয় সর্বস্ব। কিছু কিছুক্ষেত্রে দেখা যায়, জোরাজুরিতে ভুক্তভোগী আহত কিংবা নিহত হওয়ার মত ঘটনাও ঘটে। দেশের প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই রাতের আধাঁরে এমন ঘটনা ঘটে থাকে। প্রশ্ন হলো এমন চক্রের সূত্র কি বা কারা এমন জঘন্যতম কাজ করছে? তাছাড়া প্রশাসন এই বিষয়ে কতটুকু সচেতন তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। আমাদের দেশে নেশা জাতীয় দ্রব্য বলতে গেলে একেবারেই সহজলভ্য। যার ফলে হাত বাড়ালেই মিলছে নেশার খোরাক। মূলত নেশার এমন সহজলভ্যতাই আমাদের রাতের আঁধারের বিপদ ডেকে আনছে। বিষয়টি অবাক করার মত মনে হলেও বাস্তবতা তাই বলছে। নেশা গ্রস্থরা তাদের নেশার খোরাক জোগাতে কিংবা জীবিকা নির্বাহের জন্যই এমন কর্মকা-ের সাথে জড়িত হচ্ছে। এখন প্রশ্ন থাকে তাহলে দেশ থেকে নেশা জাতীয় দ্রব্য বন্ধ করে দিচ্ছে না কেনো সরকার? এর পিছনেও রয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের কারসাজি! সম্প্রতি পত্রপত্রিকার খবরাখবর থেকে জানা যায়, উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা গুচ্ছগ্রাম, গোবিন্দপুর, ধামচি এলাকায় ৩৯টির মতো বাংলা মদ তৈরির কারখানা রয়েছে। এ ছাড়া কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চানখালী, কামশাইর, নয়ামাটি, বাগবাড়ি, বরুণা, নগরপাড়া এলাকায় আরো ১৪টি বাংলা মদ তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। স্থানীয়রা এসব জায়গাকে ‘মদের গ্রাম’ হিসেবে জানেন! এসব কারখানায় প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ লাখ লিটার মদ তৈরি হয়, যার মূল্য প্রায় আট কোটি টাকা। এসব গ্রামে বসবাসরত পরিবারগুলো কোনো না কোনোভাবে মদের কারবারের সঙ্গে জড়িত। এসব মদ রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। পরে ওই মদ প্রতি লিটার এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয় বলে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে, মদের কারবারিদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পায় থানার পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ অনেকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানে নেই মসজিদ, নেই স্কুল, নেই কবরস্থান। বংশানুক্রমে সবাই মদের কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় দুই দশক আগে গুচ্ছগ্রামে মদের কারবার শুরু হয়। এখন প্রশ্ন থাকতেই পারে যে একটি গ্রামের নাম ‘মদের গ্রাম’ রূপান্তরিত হওয়ার পরেও কেনো প্রশাসন কিংবা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর এদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি? এর জবাব তাদের থেকেই নিতে হবে। সরকারি যে-সব কর্মকর্তা এমন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক। এছাড়াও দেশ এবং মানুষের স্বার্থে ওই স্থানের সকল মদ উৎপাদন কারখানা বন্ধ করে দেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করছি। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের বিকল্প নেই। আমরা প্রত্যাশা করব, সরকার ওই বিষয়ে দ্রুত একটি যৌক্তিক সমাধান গড়ে তুলবেন।