সুন্দরবনের বাঘের সর্বশেষ প্রকৃত সংখ্যা জানতে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে গনণার সকল কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জে বিভিন্ন স্থানে ৬০৫টি গ্রিটে ১২১০ টি ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের ছবি সংগ্রহ করা হয়। বাঘের সংখ্যা নির্ধারনে যাচাই বাছাই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শক সহ ৪৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ কাজে যুক্ত ছিলেন। এ গণনার কাজে ব্যায় হয়েছে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত ২০১৮ সালের জরিপে এ বনে বাঘের সংখ্যা ছিলো ১১৪ টি। সর্বশেষ বাঘ জরিপের সংখ্যা আগামীদিন ০৮ অক্টোবর ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে পশ্চিম সুন্দরবনে খুলনা সাতক্ষীরা রেঞ্জে ট্রাপিং ক্যামেরা বসিয়ে প্রথম দফায় বাঘ গণনা কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে। একই পদ্ধতিতে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে গত বছরের নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় দফায় শুরু হয় বাঘ গণনার কাজ। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ওই সময়ের মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন করা নানা কারণে সম্ভব হয়নি। যে কারণে গত ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে বাঘের সংখ্যা ঘোষনা করা সম্ভব হয়নি। পূর্ব সুন্দবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় ৪০ দিন ধরে প্রতিটি রেঞ্জে ১৪৫ টি পয়েন্টে ২টি করে ক্যামেরা বসানো হয়েছিলো। এবারের শুমারীতে বাঘের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ছবি পাওয়া গেছে। তবে একই বাঘের ছবি পাওয়া গেছে একাধিক বার। এজন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিটি বাঘের ইউনিক আইডি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও যাচাই বাছাই করেছে। গবেষনায় বাঘের বাচ্চার ছবি বেশি পাওয়া গেছে। ধারনা করা হচ্ছে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। কারণ পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় জোড়া ও একটি করে পাঁচবার পর্যটক ও বনবিভাগের চেখে পড়ে নদী সাতরে পারহওয়া ও বনে অবস্থানের দৃশ্য। একটি সুত্র মতে প্রকৃতির কারণে জল ও স্থলে লবনাক্ততার পরিমান বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাঘের অবস্থান ও ঘনত্বে। এ জরিপে বনের যে এলাকায় লবনাক্ততা কম সেখানে বাঘের বেশি ছবি পাওয়া গেছে।
২০০৪ সালে বনবিভাগ ইউএনডিপি ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দলের জরিপে ২১টি বাচ্চাসহ বাঘের সংখ্যা ছিরো ৪৪০টি। ২০০৯ সালে বনবিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ এর জরিপে বাঘ ছিলো ৪০০ থেকে ৪৫০ টি।
২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এক জরিপে বাঘের সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ১০৬টিতে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বাঘের অস্তিত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। বাঘ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধিতে নেয়া হয় নানা উদ্দোগ। অপরদিকে ২০১৬ সালের পয়লা ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২৪৯ দিনে ১হাজার ৬৫৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৩৯ টি যায়গায় গাছের সাথে ৪৯১ টি সর্বাধুনিক ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতে জরিপে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪ টি।
বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও বিভাগীয় কর্মকর্তা ডঃ আবু নাসের মোহসিন হোসেন এ প্রতিনিধিকে বলেন, বাঘ গণণার সকল কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজে বিভিন্ন পর্যায়ের ৪৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কাজ করেছেন। সুন্দরবনের শরণখোলা, চাঁদপাই, খুলনা, সাতক্ষীরা এ ৪টি রেঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ৬০৫টি গ্রিটে ১২১০ টি ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের ছবি সংগ্রহ ও গণনার কাজ শেষ হয়েছে। সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ২ হাজার ৫ শত বর্গকিলোমিটার এলাকায় এ জরিপের কাজ চালানো হয়েছে। বাঘ গণনার এ কাজে ব্যায় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগামীদিন ০৮ অক্টোবর ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। বাঘ বেড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে বলা যাবে না। তবে ঘোষনার দিন সবাই জানতে পারবেন।