মানবপাচার খবর আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। আসলে মানবপাচার কি আমাদের জানা দরকার। প্রতিবছর প্রচুর মানুষ এই মানবপাচারের শিকার হচ্ছে। আমরা গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি বিদেশ যাবার নাম করে হাজার হাজার মানুষকে পাচার করা হচ্ছে। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন করার জন্য দেশে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ বলবৎ রয়েছে। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ধারা ৩ অনুযায়ী মানবপাচার বলতে বোঝায় ” কোনো ব্যক্তিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম শোষণ বা অন্য কোনো শোষণ বা নিপীড়নের উদ্দেশ্যে ক্রয় বিক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয় দেওয়া, কাউকে ভয়ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করা, কাউকে প্রতারণা বা আর্থসামাজিক বা পরিবেশগত বা অন্য কোনো অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে, অর্থ বা অন্য কোনো সুবিধা মাধ্যমে তার উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণ করা” এর যে কোনো একটি উপায় হলে সেটাকে মানবপাচার বুঝতে হবে। এই জঘন্যতম অপরাধটি কোন একক ব্যক্তির পক্ষে একা করা সম্ভব হয় না। এই অপরাধের পেছনে থাকে বিশাল একটি চক্র। যে যে দেশে মানবপাচার হয় সেই দেশের দালালদের মধ্যে থাকে যোগসূত্র। দলবদ্ধ পরিকল্পনার মাধ্যমে এই অপরাধটি সংঘটিত হয়। সম্প্রতি জানা গেছে, বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে মিথ্যা বিয়ের ফাঁদে পড়ে বাংলাদেশি নারীরা বিদেশে পাচারের শিকার হচ্ছেন। মানবপাচারের ধরন প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। কভিড-পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটের বহুমুখী ব্যবহারের কারণে সাইবারভিত্তিক মানবপাচারের নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে একটি অপরাধী চক্র অভ্যন্তরীণ, আন্তঃসীমান্ত বা আন্তঃদেশীয় মানবপাচারে সক্রিয় রয়েছে, যার প্রধান শিকার কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা। মানবপাচার যে কত বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন, তা আমাদের দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করতে হবে, ধারণ করতে হবে। মানবপাচার প্রতিরোধে ও দমনে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস আরো শক্তিশালী করা জরুরি। সকল পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জনবল বৃদ্ধিসহ, যানবাহনের সংখ্যা এবং বিশেষ করে কোস্টগার্ডের টহল বোটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তদুপরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মানবপাচার বিষয়ক কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করা গেলে মূল্যবান ভূমিকা পালন করবে। যে-সব পথে বা পয়েন্ট দিয়ে সাগরপথে মানবপাচার হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেসব জায়গা আলোকিত করে সিসিটিভির আওতায় আনা যেতে পারে। মানবপাচার বিষয়ক নিয়মিত সভা এবং এতে সংশ্লিষ্ট সবার আরো কার্যকর অংশগ্রহণ দরকার। মানবপাচার চক্রান্তে জড়িতদের ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালের জনবলও বাড়ানো প্রয়োজন।