গত আওয়ামী সরকারের ব্যাপক লুটপাট আর অব্যবস্থাপনার কারণে দেশে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নানা প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, গ্যাস খাতের নানা দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন সময় ব্যাপক সমালোচনা হলেও তা দূর করার চেষ্টা কখনোই করা হয়নি। বরং সরকারি ও রাজনৈতিকভাবে এসব অপতৎপরতা আরও গতিশীল করা হয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই খাতটির ভয়াবহ ভরাডুবি ঘটেছে। ১৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন তহবিলের টাকা দিয়ে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ করার সুযোগ থাকলেও তা করা হয়নি। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অনিয়মের মাধ্যমে ভিন্ন খাতে ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের স্থলভাগে ও সমুদ্রে পর্যাপ্ত গ্যাস থাকলেও তা অনুসন্ধান ও উত্তোলনে গত আওয়ামী সরকার আমলে কার্যকর ভূমিকা না নিয়ে দলীয় ব্যবসায়ী ও কমিশনভোগীদের স্বার্থে এই খাতকে আমদানি-নির্ভর খাতে পরিণত করা হয়েছে। বারবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। গ্যাস বিল দেওয়ার সময় সাধারণ জনগণের টাকায় গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছিল। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত এই তহবিলে জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। ওই উন্নয়ন তহবিলের টাকা দিয়েও গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ করার সুযোগ থাকলেও তা করা হয়নি। বরং গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের টাকা গ্যাস আমদানিতে ব্যবহার করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গ্যাস উত্তোলন বাড়াতে চার বছরে ৪৬টি কূপ খনন করার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। এর মধ্যে প্রথম দুই বছর, অর্থাৎ ২০২২ ও ২০২৩ সালের মধ্যে ২১টি কূপ খননের কথা। যদিও হয়েছে মাত্র ৯টি। একই সময়ের মধ্যে নতুন কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে দিনে ২৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হওয়ার কথা। হয়েছে মাত্র আড়াই কোটি ঘনফুট, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯ শতাংশ। গ্যাস দেয়া হবে এমন কথা বলে ব্যবসায়িদের কাছ থেকে নেয়ার হয়েছে উচ্চমূল্য কিন্তু বাস্তবতা হলো কাক্সিক্ষত গ্যাস পাওয়াতে দূরের কথা সংকট দিন দিন আরো বাড়ছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে গত আগস্ট পর্যন্ত গ্যাসের বকেয়া বিল দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে পাওনা ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর সরকারি সার কারখানায় গ্যাস বিল পাওনা ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। জ¦ালানি খাতের রিপোর্টারদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বেশি, পাওনা আদায়ের হারও বেশি। আবাসিক, শিল্প, বাণিজ্যিক খাতের বিল দিয়েই সব খরচ চালানো হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে এরই মধ্যে চাপে ভুগছে শিল্প, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন। অন্তর্বর্তী সরকার নানান চ্যালেঞ্জ ও সংস্কার নিয়ে আলোচনা করলেও তার ফাঁকে গ্যাসের বিষয়টি অনেকটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। ফলে সংকট সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি এই খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। সংকট কাটাতে দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।