দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হলো ভূমিকম্প। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সুনামির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর লক্ষণ হিসেবে প্রায়ই দেশের কোথাও না কোথাও মৃদু ও মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প হচ্ছে। কিছুদিন আগেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কেঁপে উঠে ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্পে। ভূমিকম্পটি ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টার দিকে সংঘটিত হয়। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিলো ঢাকা থেকে ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণে, এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে এ কম্পন অনুভূত হয়েছে যার মাত্রা ছিল ৪.১। চলতি বছরে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প হয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে ভূমিকম্প একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যদি ঘনঘন দেশটা কেঁপে ওঠে তখন সেটা ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ অবস্থান করছে ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং মিয়ানমারের টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে। ভূমির বিশাল খ-কে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। আর দুটি টেকটোনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্ট বা চ্যুতি লাইন বলা হয়। ফল্ট লাইনে মুখোমুখি দুই প্লেটের সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশের মূল ভূভাগসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় এ রকম কয়েকটি ফল্ট রয়েছে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতের আসামে ১৮৯৭ সালে রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ঢাকা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। ওই সময় ঢাকায় মাত্র ১০০টি পাকা দালান ছিল, অধিবাসী ছিল ৯০ হাজার। ওই ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলসহ ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। জলমগ্ন এই নিম্নাঞ্চলে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এক হয়ে বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ গঠন করে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। এই যৌথ নদীপ্রবাহে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ পলিমাটি জমে। নিরবচ্ছিন্ন এই পলি স্তূপের কারণে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের নিচের ভূ-প্রকৃতি ব্যতিক্রমী ধরনের। বাংলাদেশে যেটি হতে পারে সেটি হচ্ছে ৫ মাত্রার বেশ কয়েকটি ভূমিকম্পের মাধ্যমে সে শক্তি ক্ষয় করতে পারে। আবার ৭ বা ৮ মাত্রার ২ বা ৩টি কম্পন দিয়ে শক্তি ক্ষয় করতে পারে। শেষেরটি হলে সেটা হবে তা হবে ভয়াবহ। তবে এক গবেষণা দেখা যায়, ৮ মাত্রার ওপরে ভূমিকম্পনের মতো শক্তি এ জোনে জমা হয়ে আছে। এমতাবস্থায় ঢাকা শহরে যেভাবে পরিকল্পনাহীনভাবে বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে, তাতে মাঝারি কিংবা বড় কোনো ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে দেশ। তাই ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রথমে দেশের শহরগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ, নিয়মবহির্ভূতভাবে তৈরি করা ভবনগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। ভবন তৈরির সময় মাটির গুণাগুণ গুরুত্বের সঙ্গে পরীক্ষা করতে হবে। খাল, জলাশয় ভরাট করে ভবন তৈরি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং প্রয়োজনে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাকে নিম্ন পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিম্নতম পর্যায়ে রাখার জন্য বাড়িঘর ও হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। পরিশেষে বলা যায় ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা জরুরি।