স্থানীয় পাইকার বাজারেও চামড়ার আশাব্যঞ্চক দর পাচ্ছেন না বরিশালের মাঠপর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। ফলে নগরীর পদ্মাবতী এলাকার পাইকারী চামড়ার বাজার থেকে অনেকেই ফিরে গেছেন হতাশ হয়ে। পাইকার বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবী, তাদের ট্যানারি মালিকরা একপ্রকার চামড়া সংগ্রহে অনুৎসাহিত করছেন।
বরিশাল চামড়া ব্যবাসীয় মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শাহিন বলেন, ট্যানারি মালিক বা ব্যবসায়ীদের কাছে বরিশালের চামড়া ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। প্রতিবছর কোরবানির পূর্বে কিছু টাকা ট্যানারি ব্যবসায়ীরা দিলেও এবারে খালি হাতেই ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই নতুন করে দেনাগ্রস্থ হতে রাজি হননি অনেকেই। এজন্য তিনিসহ বহু ব্যবসায়ী এবার চামড়া কেনা থেকে বিরত রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বরিশালে ২০/২২ জন চামড়ার পাইকার ব্যবসায়ী ছিলেন। যারা স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাতেন। কিন্তু দিনে দিনে চামড়ার দর পতন অব্যাহত থাকায় এবং ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা আটকে যাওয়ায় সর্বশেষ চামড়া ব্যবসায়ীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে আটজনে। যারমধ্যে এবারে মাত্র চার জনে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। ফলে সবদিক থেকে স্থানীয় বাজার থেকে আমাদের চামড়া সংগ্রহের পরিমান কমে গেছে।
পদ্মাবতীর পাইকারী চামড়া ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, এবার তিনিসহ চারজনে চামড়া সংগ্রহ করছেন। ট্যানারি মালিকরা বকেয়ার টাকা না দেয়ায় স্থানীয়ভাবে ধার-দেনা করে খুচরো ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনছেন। তিনি বলেন, কোরবানির দিন বিকেল থেকেই অনেকেই চামড়া নিয়ে আসছেন, যাদের মধ্যে মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজনই বেশি। তবে দর শুনে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। তারপরেও যারা চামড়া বিক্রি করছেন তাদের আমরা সন্তুষ্ট করতে পারিনি। আবার যারা পরিচিত তাদের সংগৃহিত চামড়া রেখে টাকা দেয়ার বদলে বাকীর খাতায় লিখে রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে আমাদের চামড়া না কেনার জন্য একপ্রকার উৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে যেখানে বিগত সময়ে ১০ হাজার পিস চামড়া কিনতাম এবারে সেখানে চার হাজার পিস চামড়া ক্রয় করেছি। সূত্রমতে, বর্তমানে আকার-আকৃতি ভেদে গরুর চামড়া প্রতি দুই থেকে তিনশ’ টাকার ওপরে ক্রয় করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, লবন দিয়ে প্রাথমিক সংরক্ষন কার্যক্রম শেষ হলে আমাদের একটি গরুর চামড়ার পেছনে আরও তিনশ’ টাকা খরচ হয়। কিন্তু ঢাকা যে দর বলছে তাতে আমাদেরও লোকসান গুনতে হতে পারে।
দাম নেই মাদ্রাসার সংগ্রহের পশুর চামড়া ॥ পশুর চামড়ার আশাব্যঞ্চক দর না পেয়ে তুলনামূলক গতবারের চেয়ে এবার মাদ্রাসায় ফ্রি চামড়া দিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বেশি। আর মাদ্রাসার সংগ্রহে চামড়া থাকলেও তারাও ১২০ টাকা থেকে দুইশ’ টাকার ওপরে কোন চামড়াতেই দর পায়নি। নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, এবার তেমন কারোরই চামড়া নেয়ার আগ্রহ ছিলোনা। প্রকার ভেদে একপ্রকার জোর করেই প্রতিটি চামড়া ১২০ টাকা থেকে শুরু করে দুইশ’ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে।