প্রশাসনেও শুদ্ধি অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: : | প্রকাশ: ১১ নভেম্বর, ২০১৯, ০৩:৪৬ পিএম : | আপডেট: ১১ নভেম্বর, ২০১৯, ০৩:৪৮ পিএম

 জনপ্রশাসনে শুদ্ধি অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত ওই অভিযান চালানো হবে। ওই লক্ষ্যে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যেসব কর্মকর্তা এখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। আর তালিকা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, একজন একজন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে তার আচরণ, কর্মক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা, সততা-দক্ষতা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এসব কার্যক্রম শেষ হলেই ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে। তবে এখনো কেউ অন্যায় করলে বা অসততা প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর্থিকভাবে সন্দেহভাজন হলেও কাউকে ক্ষমা করা হবে না। কে কার আত্মীয়, কোন অঞ্চলে জন্ম, ছাত্রজীবনে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কে পড়েছেন-এসব কোনো কিছুই বিবেচনায় স্থান পাবে না। যত উঁচুতেই তার অবস্থান হোক না কেন, অসৎ ব্যক্তির অবস্থান প্রশাসনে হবে না। এটি সরকারের জন্য চ্যলেঞ্জ। তাতে বিজয়ী না হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সচিবালয়ে কর্মরত অনেক কর্মকর্তার সততা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাদের মধ্যে সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। অনেক দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তার সততাও প্রশ্নাতীত নয়। এরকম অনেক কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের শিগিগরই স্বপদ থেকে অপসারণ করা হতে পারে। তাছাড়া সন্দেহভাজন কর্মকর্তাকে স্বপদ থেকে অপসারণ, পদোন্নতি বন্ধ, ক্ষেত্রবিশেষে বাধ্যতামূলক অপসারণসহ কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা, পদায়ন না করার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর কিছু এমপির বাধা বা অনৈতিক তদবিরে মাঠ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর গোচরে আছে। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে হবে।
সূত্র আরো জানায়, ক্ষেত্রবিশেষে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি কিছু কর্মকর্তাকে সততার বিপরীতে কাজ করতে বাধ্য করছেন। ওসব কর্মকর্তার আচরণ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ইতিমধ্যে যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে, আর সহ্য করা হবে না। সর্বশেষ জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে স্পষ্ট জানান, বেতন-ভাতা গাড়ি-বাড়ির সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পর কেউ দুর্নীতি করলে বরদাশত করা হবে না। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন এবং সচিব মো. ফয়েজ আহমেদ অতি গোপনে প্রতি রাতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন।
এদিকে জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমেদ শুদ্ধি অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে স্বীকার করে জানান, সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনযাপন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতিদিনই তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সচিব থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনের সব পদের নিয়োগ, পদোন্নতির ক্ষেত্রে সততাকে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সততার অভাব আছে এমন কেউ যদি ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে নিয়োজিত থাকেন, তাও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। মোট কথা- সততা নিয়ে প্রশ্ন আছে এমন কাউকে প্রশাসনে রাখা হবে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশাসন থেকে অসৎ, অযোগ্য, অদক্ষ এমনকি অতিদলবাজদের বিষয়ে প্রশাসনিক আইনানুগ সিদ্ধান্ত জারি করা হবে। প্রশাসনের কোনো স্তরে সততা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এমন কেউ থাকতে পারবেন না। এটি নিশ্চিত করেই দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে সুশাসন কায়েম করা হবে। সুশাসন ছাড়া কাক্সিক্ষত জনসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW