সোমেন, বিক্রম, কৌশিক আর আমি। আমরা চারবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে আমাদের গ্রামে গিয়ে হাঁস, মুরগি পালন,গরুর খামার, মাছের চাষ এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ করা শুরু করি।
আমাদের সমস্ত চাষাবাদ হয় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। সব খরচপাতি করেও অনেক টাকা থাকে। মামা আমাদের গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা বড় জমি লিজ নিয়ে কিছু অংশে ফুল আর বাকি অংশে মাছ চাষ শুরু করি। আমাদের জমির পাশেই ছিল শ্মশান।
আমাদের জমির আশপাশে তেমন কেউ যেত না। কিন্তু গ্রামের কিছু লোক আছে যারা যে কোন ভাবেই হোক মাছ চুরি করবেই। তো আমরা ভাবলাম যে পাহারা বসাব। আমাদের সাথে অনেক লোক কাজ করে। তাদের সবাইকে বলছি কিন্তু কেউ রাজি না অগত্যা আমরা চার বন্ধু দুইজন করে পাহারা দেওয়া শুরু করলাম।
বেশ উঁচু করে একটা ঘর বানানো হয়েছে সামনে বেশ কিছু জায়গা বারান্দার মতো করে তারপর ঘর বানানো হয়েছে।যাতে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে পুরো এলাকা নজর রাখা যায়। আগের রাতে সৌভিক আর স¤্রাটের দায়িত্ব ছিল পাহারার।
সকালে কৌশিক আমাকে বললো,”দোস্ত আজ আর তুই জমিতে যাস না।”
আমি বললাম, কেন?
ও বললো আমি একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি।
আমি বললাম, স্বপ্ন দেখেছিস? কি স্বপ্ন?
কৌশিক বললো যে,রাতে হালকা ঠান্ডা বাতাস থাকবে। তুই পুকুর পাড় দিয়ে হেঁটে ফুলের বাগানে যাবি বাগানে হাঁটতে হাঁটতে তুই ভয়ংকর কিছু দেখবি।
আমি বললাম যে, আমি একা থাকব না তো, বিক্রম থাকবে আমার সাথে।
ও বললো, না সোমেন থাকবে না!
আমি বললাম কেন?
বললো,জানিনা।
ওর কথা শুনে বললাম, “দোস্ত স্বপ্ন সত্যি হয় না।”
বেলা এগারোটার দিকে আমাদের পাশের বাড়ির গনেশ কাকা মারা গেলেন। উনাকে চিতায় তুলতে তুলতে বিকাল পাঁচটা বাজল।
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে কৌশিক কে বললাম,চল্ জমিতে যাই।
ও বললো, দোস্ত আমার শরীরটা ভালো না আমি যাব না আর তুই ও যাস না।সবাই বলে যেদিন কাউকে পোড়ানো হয় সেদিন নাকি শ্মশানের আশপাশে যেতে নেই।
আমি বললাম যে,কিছু হবে না।এই বলে আমি চলে গেলাম। যাবার সময় দেখলাম গনেশ কাকার চিতা তখন ও পূরোপুরি নেভেনি। আমি গিয়ে। মাঝে মাঝে চিতা থেকে বিভৎস গন্ধ আসছে। আর আজকের রাতটাও অন্যান্য রাতের তুলনায় অনেক বেশি নিস্তব্ধ।
জমিতে আসার পর মনে হলো আজ আসাটা উচিত হয় নি। এসেই যখন পড়েছি তখন কী আর করা যায়। রাত সাড়ে বারোটার দিকে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি মধ্যে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারি নাই। অনেকক্ষণ পর ঘুম ভাঙল। মোবাইল জ¦ালিয়ে দেখি রাত তিনটা বৃষ্টি ও ততক্ষণে থেমে গেছে। বাহিরে হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে।
কী মনে করে আমি ঘর থেকে বের হয়ে বাগানের দিকে যাচ্ছি; হঠাৎ গনেশ কাকার চিতার উপর নজর পড়ল। দেখলাম চিতা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেছে আর সেই জায়গায় অদ্ভুত কিছু একটা বসে আছে। আমি ভাবলাম শেয়াল কুকুর কিছু হবে। কিন্তু কাছাকাছি যেতে যা দেখলাম তাতে আমার শরীর পুরো ঠান্ডা হয়ে গেল।
আমি দেখলাম যে গনেশ কাকার চিতার জায়গায় একটা অর্ধেক মানুষ দুই হাতে ভর দিয়ে হাড্ডি খাচ্ছে।ঐ দৃশ্য দেখে আমি এক চিৎকার করতেই অর্ধেক মানুষটা আমার দিকে তাকালো। আমি এবার স্পষ্ট দেখতে পেলাম ঐ জিনিসটার চোখ বলতে কিছুই নেই। চোখের জায়গায় আগুন জ¦ল জ¦ল করছে আর বেশ বড় জিহ্বা বের করে দুটো হাতের উপর ভর দিয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে দেখে আমি ঐ খানেই অজ্ঞান।
জ্ঞান ফিরতেই দেখি স¤্রাট ,আবির আর সোমেন আমার পাশে বসে। আমি বললাম আমি এখানে কেমন করে এলাম।ওরা বললো স¤্রাট ঐ রাতে তোর চিন্তায় ঘুমায় নি। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে আমারা তিন জন জমির দিকে যেতেই দেখি তুই অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছিস। আজ তিনদিন পর তোর জ্ঞান ফিরল।
কী হয়েছিল বল তো?
আমি সবকিছু বললাম।
ঐ রাত থেকে আমার প্রচ- জ¦র হলো। আমার সুস্থ হতে অনেক দিন লাগল।ঐ দিনের পর থেকে আমরা আর কেউ ঐ জমিতে পাহারা দিতে যাই নি।